তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলাম: তালায় জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ অটো ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটা। যার চার পাশে রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী জেঠুয়া বাজার,এতিমখানা ও প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ। ইতোমধ্যে ভাটার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকায় রীতিমত আতংকে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের আলহাজ্জ মোবারক হোসেন ও আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে হাফেজ জহুরুল ইসলাম একই এলাকার কামরুল ইসলাম,মো: মোতালেব গংদের কাছ থেকে উপজেলার ১১ নং জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া মৌজার জে.এল নং-১৩০,সিট নং-১ এলাকার প্রায় ৪ একর সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে উদ্ভোধনের মাধ্যমে ইট ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। যার একপাশে রয়েছে,ঐতিহ্যবাহী জেঠুয়া হাট-বাজার,জনবহুল মালোপাড়া,ঘোষপাড়া,অন্য পাশে জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,জেঠুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,একটি এতিম খানা ও অপর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যের ধারক কপোতাক্ষ নদী।
প্রকাশ, মালিক পক্ষ অটো ভাটার নামে প্রচার দিলেও মূলত তারা সেখানে হাওয়া ভাটা তৈরীর কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। জনবহুল ও বিভিন্ন সামাজিক,শিক্ষা,ধর্মীয় ও মানবিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইটভাটা স্থাপিত হলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে সর্বস্তরের মানুষ মারাতœক ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
এদিকে,ভাটার জমি দাতা ও মালিক পক্ষ পরষ্পর যোগসাজশে বসত-ভিটা থেকে শুরু করে ফসলি জমির দাগ-খতিয়ান সম্পৃক্ত করে ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করলেও মুলত তারা বিআরএস খাস খতিয়ানের জমিতেই ভাটা স্থাপন করছেন।
এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ এর ৫৯ নং আইনের (বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভূল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইট ভাটার লাইসেন্স নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক,সংরক্ষিত বা বনিজ্যিক এলাকা,সিটি কর্পোরেশন,পৌরসভা বা উপজেলা সদর,সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন,অভয়ারণ্য,বাগান বা জলাভূমি,কৃষি জমি,প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা,ডিগ্রেডেড এয়ার শেড। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর,বা অন্য কোন কতৃপক্ষ কোন আইনের অধীন কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স,যে নামেই অভিহিত হউক,প্রদান করিতে পারিবেনা। আইনের ৩ নং ধারায় ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে নূন্যতম ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোন স্থাপনা রেলপথ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল ও ক্লিনিক,গবেষণা প্রতিষ্ঠান,বা অনুরুপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। তবে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কতৃপক্ষ ঐ এলাকায় ভাটা স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।
ভাটার ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান,ভাটার মালিক বাইরে আছে বলে আর কিছু বলতে রাজি হননি। সর্বশেষ তাদের কার্যক্রমে এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমত নানা আশংকায় আতংক বিরাজ করছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, তিনি উপজেলায় নতুন এসেছেন। এখনো পর্যন্ত এনিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এলাকাবাসী ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।