আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গঙ্গার পাড়ের আন্দোলনের ঢেউ এবার আটলান্টিক পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে। ‘উই হেট মমতা’ স্লোগানে নিউ ইর্য়কে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন মতুয়ারা। তাদের দাবি, ‘আরাধ্য দেবতা পূর্ণ ব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর এবং যুগাবতার শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম আপত্তিকরভাবে উচ্চারণের কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রত্যাখান করছেন মতুয়ারা।’ দুই সপ্তাহ পার হলেও ক্ষমা না চাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তারা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে কখনও এলে, তাকে কালো পতাকা ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিক্ষুব্ধরা।
মতুয়ারা হলো সনাতন হিন্দুধর্মের একটি সম্প্রদায়, যারা মূলত নমঃশূদ্র জাতভুক্ত। এরা ভারতের অন্যতম তফসিলি জাতি। হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীরা এই সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের মতুয়ারা সাউথ রিচমন্ডহিলের হরিমন্দিরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। এতে অংশ নেয় অসংখ্য মতুয়াভক্ত। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের সভাপতি অনুকুল অধিকারী, ডা.সমীর সরকার, ডা. প্রভাত দাস, সুশীল সিনহা, রামদাস ঘরামী, অরবিন্দ বিশ্বাস গোবিন্দ, মনিকা মন্ডল, সুমিতা বিশ্বাস, শ্যাম দাস বৈদ্য, তারক রায়, কিশোর হীরা এবং কানন বিশ্বাসরা।
এরপর ১৫ই ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কনসাল জেনারেলের অফিসে সামনে মতুয়ারা ‘উই হেট মমতা’ স্লোগানের ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করেন। ২০ জনের একটি মতুয়া প্রতিনিধি দল নিউ ইর্য়কে ভারতীয় কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে স্মারক লিপি দেন।
মতুয়া প্রতিনিধিরা কনসাল জেনারেলের কাছে হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়া দর্শন এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি মতুয়াদের হৃদয়ে তাদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবমাননাকর বক্তব্যে রক্তক্ষরণের কথা জানান।
নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কনসাল জেনারেলের অফিসে সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের সভাপতি অনুকুল অধিকারী বলেন, বিশ্বজুড়ে ১০০ মিলিয়নের বেশি মতুয়াদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য মানহানিকর বলে মনে হয়েছে। আমরা চাইছিলাম তিনি ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু দু’সপ্তাহ হয়ে গেলও তিনি তা করেননি। আর তার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বিষয়টি লিখিত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে অনুকুল অধিকারী বলেন, ‘আমরা মোদিজীর কাছে আবেদন করেছি। তিনি যেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাব। জাতিসংঘেও অভিযোগ করব। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে সুশীল সিনহা বলেন, ‘প্রতিবাদ করার জন্য সমগ্র হিন্দুদের কাছে আবেদন করছি। উনি শুধু মতুয়াদের অপমান করেননি, সমগ্র সনাতন ধর্মালম্বীদের অপমান করেছেন। আমরা নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে বলব, আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছেন। আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। বাংলাসহ গোটা বিশ্বের মতুয়ারা উনাকে প্রত্যাখান করছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করছি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে কখনও এলে তাকে কালো পতাকা ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।’