নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩৫ লাখ টাকায় তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল নারী ও শিশু পাচারকারী চক্র। প্রায় তিন সপ্তাহ পর কৌশলে মুম্বইয়ের গাউবন্দর গাঁর আটতলা ভবনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে পালিয়ে এসেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গাজনা গ্রামের পিংকি খাতুন। বাড়িতে বাবা মার কাছে ফিরে এসেও শান্তিেেত নেই পিংকি। তাকে ও তার পরিবারকে এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। না হলে আরও খারাপ দিন আসবে তাদের জন্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন পিংকি ও তার বাবা হোসেন মোড়ল।
পিংকি সরসকাঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির প্রাক্তন ছাত্রী। কে কিভাবে তাকে ভারতে পাচার করে তার বর্ণণা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন পিংকি। এ সময় তারা বলেন বাড়ি ফিরে এ বিষয়ে তিনবার কলারোয়া থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি। এমনকি পুলিশ সুপার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও মামলাটি রেকর্ড হয়নি বলে জানান তারা।পিংকি কলারোয়া থানার ওসির কাছে জবানবন্দ্রী দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিংকি ও তার বাবা জানান গত ১৫ নভেম্বর পিংকি কলারোয়া বাজারে আসেন কাপড় কেনাকাটার জন্য। এ সময় তাকে ফোন করে তাদের গ্রামের আমিরুল ইসলামের সাবেক স্ত্রী দক্ষিণ দীঘা গ্রামের আবদুল মোতালেবের মেয়ে সাবিনা খাতুন অপেক্ষা করতে বলেন। কিছু সময় পর সাবিনা এসে তাকে বলেন তার সাথে বাগআচঁড়া যেতে। ভ্যানে চড়ে সেখানে পৌছাতেই সাবিনা তাকে নাশতা খাওয়ায়। এর পর থেকে তার আর কোনো কথা মনে পড়ে না জানিয়ে পিংকি জানান কোনো এক সময় তিনি নিজেকে একটি অন্ধকারময় বাগানের মধ্যে আবিস্কার করেন। তার সামনে এসে দাঁড়ায় ধারালো ছুরি হাতে এক ব্যক্তি। তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এর পর পিংকি জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন তিনি ভারতের একটি ভবনের চারতলার কক্ষে।
পিংকি জানান সেখানে তিনি দেখতে পান তার বাড়ির এলাকার রেহানাকে। রেহানা জানায় তাকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে গেছে সাবিনাসহ কয়েকজন। তিনি জানান রেহানা গাজনা গ্রামের ইমাদুল মেম্বরের মেয়ে। সে দীর্ঘদিন ধরে মুম্বইতে বসে নারী পাচার করে থাকে। তার বাবা ইমামাদুল নারী পাচার মামলার সাজাভোগকারী আসামি। তাদের ছেলে শিমুল বাবা ইমাদুল ও বোন রেহানাকে নারী পাচারকাজে সহায়তা দিয়ে থাকে। এই তিনজনসহ সাবিনা খাতুন তাকে পাচারের সাথে জড়িত। তিনি তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন।
নির্যাতনের শিকার পিংকি জানান চারতলার ১১৬ নম্বর কক্ষ থেকে ১৮ নভেম্বর কৌশলে একটি ফোনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে তার বাবা হচেন আিিলর সাথে কথা বলে জানান ‘ আব্বা আমাকে বাঁচান। আমাকে সাবিনা মুম্বইতে পাচার করেছে। এখানে রয়েছে রেহানা। এই রেহানার বাবা ইমাদুল ও ভাই শিমুলকে আটকালে তারা তাকে উদ্ধার করে দিতে বাধ্য হবে’।
পিংকি জানান তার বাবা এ বিষয়ে কলারোয়া থানায় একটি অভিযোগ দেন। এরপর থেকে তিনি তাকে বাড়ি ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকে রেহানার ওপর। রেহানা উল্টো তার ওপর নির্যাতন করতে থাকে। এরই মধ্যে রেহানার ভাই শিমুল সেখানে পৌছায় । শিমুল তার হাত পা জড়িয়ে ধরে জানায় তাকে বাড়ি ফেরত নেওয়া হবে তবে তার ওপর দোষারোপ করা যাবে না। কয়েকদিন পর পিংকি ও শিমুল সেখান থেকে ট্রেনে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।তাদেরকে প্রথমে কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর অফিসে নিয়ে এসে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মীমাংসায় সম্মত না হয়ে পিংকির বাবা ৮ ডিসেম্বর কলারোয়া থানায় আরও একটি এজাহার দেন। তিনি জানান সেটিও রেকর্ড হয়নি। পিংকির বাবা জানান এ বিষয়ে তারা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করে সবকিছু জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার কলারোয়া থানার সংশ্লিষ্ট এসআইকে ডেকে মামলা নিতে বলেছেন। তা সত্ত্বেও মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
পিংকি ও তার বাবা জানান এখন শিমুল ও তার বাবা ইমাদুল মেম্বর তাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা আরও ক্ষতি করবে বলেও শাসিয়েছে।
পিংকি ও তার বাবা এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পাচারকারীদের কবল থেকে মুম্বাই থেকে ফিরলো পিংকি, মামলা নিচ্ছেনা কলারোয়া থানা পুলিশ
পূর্ববর্তী পোস্ট