জাতীয় ডেস্ক:
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রভাতফেরির জনস্রোত মিশেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
প্রাণের মেলায় শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী এবং প্রবীণরা সবাই বরণ করে নিয়েছেন বাংলা ভাষার সাহিত্য। মাতৃভাষার হাজারও সম্ভারের সঙ্গে পরিচিত হতে দেখা যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও। আর প্রবীণদের প্রতিজ্ঞা মাতৃভাষাকে সবসময় সমুন্নত রাখার।
মায়ের ভাষার অমূল্য বর্ণমালার জগতে শ্রদ্ধা মেশানো চোখে ডুব দেয়া। পোশাকে অমর একুশের ছোঁয়া সেটাই বলে দিচ্ছে। প্রভাতফেরি শেষে জনস্রোতের পরবর্তী গন্তব্য ছিল একুশের গ্রন্থমেলা বা বই মেলা।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বই মেলায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ এসেছে মায়ের হাত ধরে, আবার কেউ এসছেন আত্মীয় স্বজন আবার প্রিয়তমা কিংবা পরম বন্ধুর সঙ্গে। মাতৃভাষাকে ভালোবাসার দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় সবাই ছিল উদ্ভাসিত। এদিন যেন মাতৃভাষায় রচিত প্রতিটি বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় একেক বর্ণমালা, বাক্য, গল্প, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধের মেলবন্ধনে একাকার সবাই।
প্রাণের বই মেলায় শিশু, কিশোর, তরুণ-প্রবীণদের মাঝে উন্মোচন হয় সমৃদ্ধ বাংলার অজানা ভাণ্ডার।
এবারই প্রথম ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন তাজরিন খান। তাজরিন খান বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে।’ আর ছোট্ট নিরিখ বলে, ‘এখানে আসতে আসতে মা ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে বলেছে। শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি। এখন বই কিনবো।’
নিরিখের মা আরও বলেন, ‘মাতৃভাষার আন্দোলন নিয়ে ছেলেকে গল্প শুনিয়েছি। এখন মেলা থেকে বই কিনবো। আমরাও পছন্দের লেখকদের বই নেবো।’
মেলায় আগতরা এদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পাতায় খোদাই করে থাকা ভাষা শহীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানানোর শপথ নেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন কোনোভাবেই যেন বিলেতি কোনো ভাষার কাছে ম্রিয়মাণ না হয় প্রাণের দামে কেনা মাতৃভাষা বাংলার মান রাখতে পারেন।
মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ ও মায়ের ভাষায় রচিত সাহিত্যের স্বাদ দেবার এদিনে কোটি বাংলাদেশির সঙ্গে শামিল হয়ে প্রাণের মেলায় হাজির হয়েছেন হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা বিদেশিরাও।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষাপ্রকাশের কর্ণধার বলেন, ‘সাধারণত সরকারি ছুটির দিনে মেলায় বই বেচাকেনা হয় বেশি। সেই হিসেবে আজ সকাল থেকে মেলায় পাঠক উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। বই ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
ভাষার মায়ার বুঁদ হয়ে থাকা অমর একুশে মেলার প্রতিটি কোন, প্যাভিলিয়ন, স্টল সেজেছে আজ একুশের সাজে।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা বসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলায় ঢুকতে রয়েছে তিনটি ফটক। প্রতি ফটক দিয়ে পাঠকরা লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকছেন। বাংলা একাডেমিতে একটি ফটক রয়েছে। সেখানেও লাইন ধরে মেলায় ঢুকছে মানুষ। পুলিশ সদস্যরা সবাইকে তল্লাশি করছেন।