বাংলাদেশের কোস্টগার্ড বলছে তারা ৩৮২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকা উদ্ধার করেছে যারা প্রায় দুই মাস ধরে সমুদ্রে ভাসমান ছিল। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বিবিসি’র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জোনাথন হেডের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী ঐ নৌকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশজনের বেশি মারা গেছে। কিন্তুবাংলাদেশের কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন যে, ঐ নৌকাটিকে উদ্ধার করার সময় সেখানে কোনো মৃতদেহ তারা পাননি। তবে প্রায় দুই মাসের মত সময় ধরে নৌকাটি সমুদ্রে ভাসমান থাকাকালীন সময় নৌকায় থাকা কারো মৃত্য হয়েছে কিনা, সেবিষয়ে তাদের এখনো ধারণা নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।
সংবাদদাতা জোনাথন হেড জানান, এর মধ্যে নৌকাটির সাথে যাদের যোগাযোগ হয়েছিল, তারা বলছেন নৌকাটি গত মাসে মালয়েশিয়ার উপকূলে ভেড়ার উদ্দেশ্যে দু’বার আন্দামান সাগর পারাপার করেছে। নৌকায় খাবার শেষ হওয়ার পর তারা জেলেদের কাছ থেকে খাবারও কেনার চেষ্টা করে, কিন্তু মালয়েশিয়ায় কড়া লকডাউন থাকায় শেষপর্যন্ত কিনতে পারেনি।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে এবং থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে এরকম বেশ কয়েকটি শরণার্থীদের নৌকা ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে। ঐ শরণার্থীরা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন না মিয়ানমার থেকে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে এর আগে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের আটকও করা হয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর চালানো সহিংসতার পর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। কোস্টগার্ডের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট শাহ জিয়া রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, “আমরা একটি বড় মাছ ধরা ট্রলার থেকে ৩৮২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে তাদের টেকনাফের কাছে একটি তীরে এনেছি।”
“নৌকায় তারা গাদাগাদি করে ছিল। তাদের কাছে কোনো খাবার ছিল না। তারা গত ৫৮ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসছে এবং গত সাতদিন ধরে বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ছিল।”
লেফটেন্যান্ট রহমান জানান তারা খবর পাওয়ার পর তিনদিন ধরে খোঁজ করার পর নৌকাটির সন্ধান পান। লেফটেন্যান্ট রহমান জানিয়েছেন, “তারা যেখানে নেমেছে ঐ জায়গাটা আলাদা করে রেখেছি আমরা। তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা না জানার আগ পর্যন্ত আমরা তাদের প্রশ্ন করতে পারছি না।”
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজ্যহীন গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বাসভূমি মিয়ানমারের সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নেয় না এবং দীর্ঘ সময় ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়ে আসছে।
বিবিসি