মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের প্রজন্ম ধ্বংশের একমাত্র মাদকের নাম ইয়াবা! যাকে আমরা সর্বনাশা ইয়াবা বলে থাকি। এই ইয়াবা নিয়ে সংবাদপত্রে গণমাধ্যমে আলোচনা, প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষনাসহ অসংখ্য ইয়াবা বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ইয়াবা নাটক নিয়ে অসংখ্য লেখা লেখি হওয়ার পরও ইয়াবা বাংলাদেশে কিভাবে প্রবেশ করে তার রহস্য এখনো উদ্ধার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
সাম্প্রতিক সেনা কর্মকর্তার হত্যার অভিযোগে আটককৃত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীর নামে অসংখ্য নিরহ মানুষ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। প্রদীপ প্রতিদিন কোননা কোন মানুষকে তার ইচ্ছামত ধরে এনে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করতেন। হত্যাটা তার ইয়াবা নেশার মারাত্মক আকার ধারন করেছে। হত্যাকান্ডের পাশাপাশি নিরহ মানুষদেরকে তথা কথিত ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে তাঁকে চাঁদা দিতে বাধ্য করত। এই ইয়াবা বাংলাদেশের আগমনের কথা বেশি দিনের নয়। এই সর্বনাশা ইয়াবা সহজভাবে সহজ উপায়ে বাংলাদেশের আনাচে কানাছে স্থান করেনিয়েছে। রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার নেশায় মানব ধ্বংসের এই ইয়াবা কোমলমতি ছেলে সন্তানের হাতে পৌছিয়ে দিয়েছে এক শ্রেণীর মানুষ নামীয় দানবরা।
আজকে ইয়াবার কথা লিখতে গিয়ে অপ্রিয় কিছু সত্য কথা লিখতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা জানি সীমান্তে আমাদের বর্ডার গার্ড রয়েছে তারা সীমান্তস্থলে পাহারা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে জলে পাহারারত কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সীমান্ত রক্ষাটিম। আজকে বিবেকের কাছে প্রশ্ন প্রশাসন তিনটি গ্রুপ জলে স্থলে সীমান্তে রাতদিন দায়িত্ব পালন করার পরও কিভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করতে পারে? তাহলে আমরা কি ধরেনিব তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উড়ন্ত পাখির মাধ্যমে ইয়াবা বাংলাদেশে নিয়ে আসে? বাংলাদেশে প্রবেশের পর ইয়াবার ছড়া ছড়ি। নিয়ন্ত্রন করার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর। এতগুলোর পর কিভাবে ইয়াবা বাজারজাত হয় কারা করে? কিভাবে করে? প্রশাসন জেনেও কি জানে না ? আমরা দেখতে পাই বর্ডার গার্ড মাঝে মধ্যে পরিত্যাক্ত ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে থাকে। তাহলে এই পরিত্যাক্ত ইয়াবা কেমন করে আসল তার রহস্য কখনও উৎঘাটিত হয়নি করতে পারেনি। ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যার প্রেক্ষিতে অসংখ্য প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক হওয়াসহ নাটকীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। টেকনাফ থানায় ওসি প্রদিপ একাই মেরেছেন ২০৫জন। তার ভাষায় সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী। যদি টেকনাফ কক্সবাজার এলাকা হতে ২০৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয় তাহলে আর কতজন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে যারা এখনও ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার ঘোষণা থাকলেও সত্যকার অর্থে প্রশাসনের আন্তরিকতার দূর্বলতার কারণে প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক হয়নি বা বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়নি।
বাংলাদেশের একসময় আমরা যুব সমাজকে ধ্বংস হতে দেখেছি ভারত থেকে আগত মরন নেশা ফেন্সিডাইলের কারণে এখন মায়ানমার থেকে আগত ইয়াবা কারণে। সীমান্তে কড়া পাহারায় প্রহরীরা থাকার পরও ইয়াবা যদি বাংলাদেশে চলে আসে তাহলে এই ব্যর্থতার দায়িভার কার? এই দায়িভার নিশ্চয় দায়িত্বরতদের। আমরা সবাই জানি সবাই বুঝি প্রশাসনের মধ্যে একটি অসাধু গ্রুপ রয়েছে যারা কোননা কোনভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা করে ব্যবসায়ীদেরকে ইয়াবা ব্যবসায় উৎসাহিত করে যা সত্যকার অর্থে তদন্ত করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। সীমান্তে বিশেষ করে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে বর্ডার গার্ড কর্মকর্তা কোস্টগার্ড বিশেষ করে পুলিশ কর্মকর্তারা কে কতদিন দায়িত্বপালন করেছেন তাদের অর্জিত সম্পদের বিবরণ নির্নয় করলে প্রমাণ মিলে যাবে। অসাধু কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে সহজে।
আজকে সেনা কর্মকর্তা পুলিশ কর্তৃক গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার পরর বাংলাদেশের সকল প্রশাসন নড়ে চড়ে বসেছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠে আসছে প্রদীপেরা কতজন মানুষকে পাখিরমত হত্যা করেছে। আজকে যদি আমরা জনগণের গণ আদালত থেকে দায়িত্বরত সম্মানিত ডিজিএফআই, এনএসআই তাদের কাছে জানতে চাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা টিমের আপনার কতটুকু ন্যায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন? প্রদীপেরা একদিনে এতগুলো মানুষ হত্যা করেনি। হাজার কোটি টাকার মালিক একদিনে হয়নি। নিশ্চয় সময় লেগেছে। তাহলে এতো সময় থাকার পরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়ান্দা বাহিনীর এই রহস্য উদঘাটিত করতে পারেনি কেন ? আজকে বিবেকের কাছে প্রশ্ন করার সময় এসেছে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের লাল সবুজের পতেকার দেশ স্বাধীন করেছি। এই স্বাধীনতার জন্য মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ বছর আন্দোলন করেছেন। তাঁর সোনালী যৌবন কেটেছে কারাগারে। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী বাংলাদেশে আসার দুইদিন আগপর্যন্ত তিনি জেল খেটেছেন ১৪ বছর ৩ মাস ২৭ দিন। সেই সোনার বাংলা সোনার দেশ করার জন্য একবুক স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন যুদ্ধ করেছেন তেমনি বঙ্গবন্ধু ৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালো রাতের আগ দিন পর্যন্ত দেশকে পরিপূর্ণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। পরিপূর্ণ করার আগেই সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়। আজকে বঙ্গবন্ধুর আত্মা নিশ্চয় আত্ম চিৎকার করছে। তার হাতে গড়া এই দেশ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আইনের শাসন আজ প্রশ্নবোধক। অর্থনীতিতে দেশ স্বনির্ভর হলেও দূর্নীতিবাজ লুটেরারা লুটপাট করে খাচ্ছে এই দেশের জনগণের রক্তের অর্থ।
এই ইয়াবা নিধনের জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে ইয়াবা ব্যবসায়ী সত্যকারে কারা? তাদেরকে বন্দুকদিয়ে হত্যা না করে আইনের মাধ্যমে বিচার কার্য শেষ করে তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত যতদিন পর্যন্ত করা হবেনা ততদিন পর্যন্ত এই প্রদীপেরা কোননা কোনভাবে দেশকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাবে। আজকে ইয়াবা সেবকদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা অনেক এগিয়ে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোননা কোন শিক্ষার্থী ধাবিত হচ্ছে সর্বনাশা ইয়াবা নেশার প্রতি। আমরা আগামী প্রজন্মে মেধা নিয়ে এখন ভাবতে হচ্ছে। মেধা শূন্য দেশ গড়ার জন্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যে দেশ থেকে আমাদের দেশে ইয়াবা আসে সেই মায়ানমার রহিঙ্গাদেরকে আমাদের দেশে চাঁপিয়ে দিয়ে যেমন বড় ধরনের অর্থের ক্ষতি করে যাচ্ছে অন্যদিকে ধ্বংস করে যাচ্ছে আমাদের কোমলমতি সন্তানদেরকে। এই সর্বনাশা ইয়াবা ব্যবসা আদৌ কি এই দেশে বন্ধ হবে? – প্রশ্ন সচেতন মহলের কাছে।