আতিয়ার রহমান, মণিরামপুর: দিনমজুরি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালই কাটছিল বিপ্লবের। স্বপ্ন ছিলো টাকা জমিয়ে খুঁটির খুপরি ছেড়ে ইটের ঘরে ওঠার। কিন্তু বিপত্তি ঘটে দুই বছর আগে। আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে তার মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায় । জমানো টাকাসহ হাট-বাজার থেকে সাহায্য নিয়ে চার লাখ টাকা খরচ করেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হলো না তার। অবশেষে দুই পা অকেজো হয়ে হুইল চেয়ারে বন্দী জীবন কাটতে শুরু করে বিপ্লবের।
ইটের ঘরের আশা-দুরাশা হলো বিপ্লবের। ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে নিতে না পেরে দুই হাজার টাকায় বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে চা পানের দোকান বসিয়ে নেয়। বড় ভরসা তার স্ত্রী জোহরা বেগম। রাস্তায় কর্মসূচির কাজ করে স্ত্রী জোহরা। স্কুল পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এভাবে দিন কাটতে শুরু করে অসহায় এই পরিবারটির।
হঠাৎ একদিন বিপ্লবের বাড়িতে হাজির যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, মণিরামপুর সদর দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। বিপ্লবের পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া দুই শতক ভিটায় নিজেদের অর্থায়নে সেমি পাকাঘর করে দেওয়ার আশ^াস দেন তারা। সে অনুযায়ী এক লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচা করে সংযুক্ত টয়লেট, রান্নাঘরসহ রঙিন টিনের দুইকক্ষের ইটের ঘর নির্মিত হয়েছে বিপ্লবের ভিটায়। ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছে পুরো পরিবারটির মুখে। বিপ্লব মণিরামপুর উপজেলার নাগোরঘোপ গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলাম পাটোয়ারীর ছেলে।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অরুন কুমার কুণ্ডু বলেন, ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, তবে ইউএনও অফিসের সহায়তায় বিপ্লবের খোঁজ পাই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের গৃহপ্রদান কর্মসূচির আওতায় আমাদের ১৭ জন কর্মকর্তা নিজেদের অর্থায়নে এক লাখ ৭২ হাজার টাকায় তাকে একটি ঘর করে দিচ্ছি। দ্রুত ঘরটি হস্তান্তর করা হবে। দেশের এমন আরো এমন অসহায় পরিবার থাকতে পারে, তাদের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এমন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসবেন এমনটাই আহবান এই কর্মকর্তার।
অসহায় বিপ্লব জানায়, আমগাছ থেকে পড়ে আমার সব শেষ হয়ে যায়। দুই বছর চারমাস ধরে জীবনটা এক প্রকার অচল। দুই পা অকেজো হওয়ায় এখন হুইল চেয়ারে সীমাবদ্ধতার মধ্যে চলাফেরা করি। বংশে কেউ ভিক্ষুক ছিল না। তাই সেই কাজ করতি পারিনি। বাড়ির সামনে একটা দোকান দিছি। ওতে দিন চলে যাচ্ছে। বাঁশের খুঁটি আর টিনের বেড়ার ঘরে কষ্টে থাকিছি। ইটের ঘরে ঘুমোব ভাবতি পারিনি। পল্লী বিদ্যুতের স্যারেরা আমারে ঘর দিছে। এতে হাজার শুকরিয়া জানায় যারা এ অদমের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খুশি আজ ইটের ঘরে ঘুমোবো, সুস্থ্য জীবনের সেই স্বপ্ন সৃষ্টি কর্তায় যেন পুরণ করেছে।