ন্যাশনাল ডেস্ক: সরকার নির্ধারিত কিছু কাজের বাস্তবায়নকারী সহযোগী সংস্থা হচ্ছে অধিদফতর। এখানে সরকার অর্থ হচ্ছে মন্ত্রণালয়। যেহেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কাজই করে অধিদফতর, সেহেতু মন্ত্রণালয়কে বাদ দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে করার কোনও কাজ করার এখতিয়ার বা সুযোগ অধিদফতরের নেই। অধিদফতর যে কাজ করে তা অবশ্যই মন্ত্রণালয়কে জানতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কনসার্ন নিয়েই কাজ করে অধিদফতর। মন্ত্রণালয় যতটুকু কাজ দেবে, অধিদফতর ঠিক ততটুকু কাজই করবে। এর বেশি বা কম নয়। অধিদফতর তার কাজের জবাবদিহিতাও করবে মন্ত্রণালয়ের কাছে। তাই অধিদফতরের করা কাজের সার্বিক মনিটরিং করবে মন্ত্রণালয়। কাজেই অধিদফতর যা করে সে বিষয়ে ‘জানি না’বলার সুযোগও মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ অধিদফতর যা করে তা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েই বা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই করে।
কাজের সুবিধার জন্যই সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের পরেই অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর অন্য যে কোনও অধিদফতর থেকে ভিন্ন নয়। মন্ত্রণালয়ের কনসার্ন ছাড়া কোনও কাজ করার এখতিয়ার নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের। সরকারের রুলস অব বিজনেস এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং সরকারের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাহী ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অধিদফতরের প্রধান কাজ দেশের সর্বস্তরে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, কর্মপরিকল্পনা এবং প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন নীতি কার্যকর করা। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা প্রণয়নে কারিগরি সহযোগিতাও প্রদান করে থাকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর নামের সংস্থাটি স্বাধীনতার আগে ১৯৫৮ সালে স্বাস্থ্য পরিদফতর নামে স্থাপিত হয়। ১৯৮০ সনে এটি স্বাস্থ্য অধিদফতরে উন্নীত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মহাপরিচালক। তাকে দুই জন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজের সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও লাইন ডাইরেক্টর (বিষয়ভিত্তিক পরিচালক), পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মরত আছেন। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয় পরিচালকরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও ওয়েবসাইট সূত্রে আরও জানা গেছে, সব মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল সেই মেডিক্যালের অ্যাকাডেমিক কার্য সম্পাদন করেন। প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন এবং উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) শাখাটির লাইন ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এম এ মান্নান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনও স্বাধীন সংস্থা নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংস্থা। অধিদফতর যে কোনও কাজের জবাবদিহি করবে মন্ত্রণালয়ের কাছে। এটিই রুলস অব বিজনেস। অধিদফতরের সব কাজের বিষয় মন্ত্রণালয়কে জানতে হবে, জানাতে হবে। মন্ত্রণালয় যতটুকু কাজ দেবে অধিদফতর ততটুকুই করবে।
প্রসঙ্গত, করোনাকালে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করা চুক্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের জানা না জানা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এ বিষয়ে নানা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুরোধে গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে কিছু প্রসেস আছে, সেগুলো পালন করে ডিজি অফিস। সেই প্রসেস পালন করে তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে, সই করেছে। কী স্বাক্ষর হবে, রিজেন্টের সঙ্গে স্বাক্ষর হবে। আমরাও খুশি ছিলাম যে, একটি নতুন হাসপাতাল এলো করোনা চিকিৎসা দিতে এই ভেবে। কারণ বেসরকারি কোনও হাসপাতাল তখনও করোনা চিকিৎসা দিতে রাজি ছিল না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘উনারাও আসলেন, তারপর সই-স্বাক্ষর হলো, আমরা খুশি হলাম। পরবর্তী ঘটনাগুলো, খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ন্যক্কারজনক। সেখানে টেস্ট করে কিনা তাও আমি জানি না। এখানে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে কিনা তাও আমি জানি না। মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে তো তা ফাইলেই থাকবে। ডিজি ব্যাখ্যা দিলেই পাওয়া যাবে। আমরা তার ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছি।