ঝাউডাঙ্গা, আগরদাড়ি, ফিংড়িসহ পৌরসভায় ঈগলের কর্মীদের হুমকি;
লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টারে মাহজোটের প্রার্থী দাবী;
জাতীয় পার্টি মহাজোটের প্রার্থী নয়- জেলা রিটার্নিং অফিসার
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উত্তাপ ছড়ানো সাতক্ষীরা সদর ০২ আসন;
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরা সদর ২ আসন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন ও সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনকে মারপিট করে লাঙ্গলের সমর্থকরা। সাতক্ষীরা সদর ২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী না হয়েও নির্বাচনী ব্যানারে মহাজোটের প্রার্থী উল্লেখ করেছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র বিরুদ্ধে একের পর এক মানহানিকর বক্তব্য ও তার সমর্থকদের হুমকি ধামকি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু তার নির্বাচনী ব্যানারে ও অনলাইনে প্রদর্শিত পোস্টারে মহাজোটের প্রার্থী দাবী করেছে যা নির্বাচনী নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাতক্ষীরা পৌরসভার সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠের প্রবেশদ্বারে, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বারের বাড়ির গেটে, মুনজিতপুর সিলভার জুবলি স্কুল মোড়ে, বিসমিল্লাহ মসজিদ রোডে সহ একাধিক স্থানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু’র মহাজোটের প্রার্থী দাবী করা ব্যানার প্রদর্শন করা হচ্ছে। অন্যদিকে তার মহাজোট সাতক্ষীরা নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে আশারাফুজ্জামান আশুকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে পোস্টার প্রদর্শন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে ওই আইডি থেকে আশরুফুজ্জামান আশুর নির্বাচনী প্রচারণা করা হচ্ছে।
লাঙ্গল প্রতীকের বিভিন্ন জনসভায় একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু ও তার সমর্থকরা। গত ২৪ ডিসেম্বর ঝাউডাঙ্গায় লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী জনসভায় ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতে না দেওয়ার আহবান করে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন এবং যুবলীগ আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সাবেক সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঝাউডাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসে অবস্থান করা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক অমরেন্দ্র ও সাংবাদিক ইয়ারব সহ পাঁচ জনকে খালেকের নেতৃত্বে লাঙ্গল এবং যুবলীগের লোক জন মারপিট করেছে। তবে একাধীক আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে এসব আচরণ বিধি লঙ্ঘন ও হুঙ্কারের পেছনে জেলার একাধীক শীর্ষ নেতাদের মদদ আছে।
একই রকম ঘটনা ঘটছে এ সাংসদীয় আসনের অন্যান্য জায়গাতেও। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মইনুল ইসলাম আগরদাড়ি ইউনিয়নের জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র ঈগল সমর্থনকারী তৃণমূল আওয়ামী নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। একই অভিযোগ উঠেছে ফিংড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফিংড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার ঝুঁটিতলা ঋষিপাড়াসহ একাধিক জায়গার ঈগলের কর্মীদের হুমকি ধমকি দেওয়ারও অভিযাগ উঠেছে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা সদর ০২ আসনে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি অব্যাহত থাকায় ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উত্তাপ ছড়ানো সাতক্ষীরা সদর ০২ আসন।
ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আচরণ বিধির ১১ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বরাবর অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরা সদর ২ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। অভিযোগে তিনি বলে, ‘‘আমি সাতক্ষীরা সদর ০২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আমার নির্বাচনী প্রতীক ঈগল। আমি একাদশ জাতীয় সংসদের একজন সদস্য এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উর্দ্ধতন সহ-সভাপতি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার একজন প্রতিদ্বন্দি লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী জনাব আশরাফুজ্জামান আশু তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা পূর্বক আমার চরিত্র হনন, উষ্কানিমূলক এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন যাহা নির্বাচনী আচরণ বিধির ১১ এর ক ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। তার বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড পৃথক পেনড্রাইভে সংযুক্ত করা হলো। বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতঃ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনাকে অনুরোধ করছি। ”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, ‘অভিযোগের বিয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অন্যদিকে জোট-মহাজোট প্রশ্নে তিনি জানান, ‘জাতীয় পার্টি মহাজোটের প্রার্থী নয়।’