শেখ আব্দুল হাকিম/ জিয়াউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর থেকে :
গত ২৬ মে বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়ি নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গাবুরা,পদ্মপুকুর,বুড়িগোয়ালিনীসহ ১০টি ইউনিয়নের উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের লোকালয়ে ঢোকা নদীর পানির প্রবেশ পথ বন্ধ হলেও তিন ইউনিয়নে নদীর পানি উঠানামা অব্যহত রয়েছে। পাউবো”র বেড়িবাঁধ বাধা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়রা বাঁধ বাধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম,আতাউর রহমান ও ভবতোষ মন্ডল জানান। তিনিটা ইউনিয়নে প্রায় ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আর দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুর ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড়ে ১২টি ইউনিয়নে সরকারি ভাবে তাৎক্ষনিক বরাদ্দ ৩২ মেট্রিকটন চাল ও নগত ৩৩ লক্ষ টাকা গত বৃহস্পতিবার স্ব -স্ব ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরোও জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত সরকারি ভাবে আরোও ২০ মেট্রিকটন চাল ও ১৩ শ’প্যাকেট শুখনা খাদ্য হাতে পেয়েছি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, ইয়াস ঘুর্ণিঝড় উপলক্ষে ১২টি ইউনিয়নে গত বৃস্পতিবার নগত ৩৩ লক্ষ টাকা এবং জি-আর ৩২ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গাবুরায় ৭ মেট্রিকটন চাউল ও নগত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পদ্মপুকুরে ৯ মেট্রিকটন চাউল ও নগত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বুড়িগোয়ালিনীতে ৫ মেট্রিকটন চাল ও নগত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কৈখালিতে ৫ মেট্রিকটন চাল ও নগত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন, মুন্সিগঞ্জ, নুরনগর, রমজাননগর, আটুলিয়া, কাশিমাড়ী, ইউনিয়নে ১ মেট্রিকটন চাউল ও নগত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চেক দেওয়া হয়েছে। তবে ভূরুলিয়া ও ঈশ্বরীপুর দৃ-টি ইউনিয়নে ২ লাখ ৭৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হলেও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ১২ টি ইউনিয়নে শিশু খাদ্য কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। গো খাদ্য কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। তিনি আরোও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলোতে পর্যায়ক্রমে সরকারি সাহায্যে অব্যাহত থাকবে।
বিভিন্ন ইউনিয়ন গুলোতে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শনিাবার সকাল পর্যন্ত বরাদ্দ কৃত চাল ও টাকা বিতরণ করা হয়নি বলে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম, ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন জন প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পানিবন্দি মানুষের ত্রান হিসেবে ও বেড়িবাঁদের সংষ্কারের কাজে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বরাদ্দে চাল ও টাকা ব্যয় করা হয়নি বলে জানা গেছে।
৩ নং শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বৃহস্পকিবার কোট থেকে আসার পর বিকাল ৫ টার দিকে ইউপি সচিব বরাদ্দের চেকটি হাতে ধরিয়ে দেয়। তখন ব্যাংক থেকে টাকা তোলা সম্ভব হয়নি। তবে আমার নিজ টাকা থেকে দুস্থদের মাঝে নগত টাকা খিচুরী রান্না করে অসহায় মানুষদের থেতে দিয়েছি।
ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা ফারুক হোসেনের সাথে মুঠো ফোনে বরাদ্দের টাকা বিতরনের বিয়ষ জানতে চাইলে তিনি রাগাম্বিত কন্ঠে বলেন, আমার ইউনিয়নের টাকা কখন বিতরণ করবো না করবো আপনাকে বলতে হবে কেন, বলে ফোনটি কেটে দেন। পদ্মপুকুর, গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি এস এম জগলুল হায়দার বলেন, ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পানিবন্দি মানুষ ও বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজে বরাদ্দে চাল ও টাকা তাৎক্ষনিক ব্যয় করতে হবে। যদি কোন চেয়ারম্যার ব্যয় না করে থাকে তবে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
শ্যামনগরে সরকারি ত্রান নিয়ে লুকোচুরি ও তামাসা
পূর্ববর্তী পোস্ট