শেখ আব্দুল হাকিম,শ্যামনগর থেকে:
শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন ও জেলা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে ২০১৯-২০ দুই বছরে শিক্ষক বদলি হয়েছে ৭১ জন। অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রতিটি বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির নির্দেশিকায় আছে কোন শিক্ষক এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলি হতে চাইলে প্রতি বছরের জানুয়ারী হতে মার্চ মাসের মধ্যেই হতে হবে।
উল্লেখ আছে বদলির ক্ষেত্রে এক জন শিক্ষক এক স্থান হতে অন্য জায়গায় যোগদান করার পর থেকে তিন বছরের মধ্যে অন্য কোথাও বদলি হতে পারবে না। আরো উল্লেখ আছে, ৪০ জন শিক্ষর্থীর বিপরীতে এক জন শিক্ষক থাকবে। সে ক্ষেত্রে যদি কোন শিক্ষক বদলি হতে চায় তবে তার কর্ম স্থলে অন্য একজন শিক্ষক দিয়েই বদলি নিতে হবে। কিন্তু কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন ও জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমিন যোগসাজসে শুধু মাত্র টাকার মোহে পড়ে শিক্ষক বদলি বানিজ্যে লিপ্ত হন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বদলি বানিজ্যে অর্ধকোটি টাকা ঘুষ আদায় করেছে বলে ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানান।
বদলি বানিজ্যের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন শ্যামনগর উপলো শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সহকারী (কাম কম্পিউটার) খায়রুল আলম, এক জন শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা হতে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে হতো। এসব বদলির টাকা শ্যামনগর শিক্ষক সমিতির নেতাদের হাত ঘুরে বদলি বানিজ্যের অর্ধেক টাকার ভাগ পেত উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসার। আর বাকী অর্ধেক টাকা শিক্ষক গোছের নেতাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। এদিকে অফিস সহকারী খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচারণ ও অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রে ঘুষের টাকা ছাড়া ভূক্তভোগী শিক্ষকরা রেহাই পেতেন না। এমনকি তার খারাপ আচারনে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষিকারা কেঁদে ফেলেছে বলে প্রতিবেদকের জানান।
অভিযোগ আছে, আশাশুনির ৮২নং স্কুল হতে সহকারী শিক্ষক মমতা বালা গাইন বদলি হয়ে ২৫ এপ্রিল ৫১৫/২৮ নং স্বারকে শ্যামনগরে ১৭১ নং স্কুলে যোগদান করেন। একই বছরে উক্ত শিক্ষক ১৭১ নং স্কুল হতে ১৯ ডিসেম্বর বদলি হয়ে ২৩ নং স্কুলে যোগদান করেন। ঐ শিক্ষক ২৪মার্চ ২০২০, ৩০ নং স্কুলে নিয়ম বর্হিভূত ভাবে বদলি হন। বদলি চিঠিতে দেখা যায়, সোমা রানী ৩১ মার্চ ১২৬১ নং স্বারকে ৭৮ নং স্কুল হতে ৮০ নং স্কুলে যোগদান করেন। একই দিনে উক্ত শিক্ষক ১২৬৯ নং স্বারকে ৯১ নং স্কুলে বদলি হন। ঐ শিক্ষক একই বছর ২৮ নভেম্বর ১৬০ নং স্কুলে নিয়ম বর্হিভূত ভাবে যোগদান করেন।
২০১৯ সালে ১৭৩ নং সোরা স্কুলে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে দুই জনকে বদলি ও দুই জনকে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে মাত্র এক জন শিক্ষক তথা প্রধান শিক্ষক মাওঃ ওমর ফারুক (সৃষ্টিকৃত সচিব) ৩৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাই স্কুল পরিচালনা করেন। ৫০ নং গাবুরা স্কুলে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে চার জনকে বদলি করে ২২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রধান শিক্ষক একাই স্কুল পরিচালনা করেন। ১২২ নং স্কুলে দুই জনকে অবৈধ ভাবে বদলি করে প্রধান শিক্ষক একাই স্কুল পরিচালনা করেন। ১০০ নং স্কুলে ৪ জন শিক্ষক হতে ২ জনকে বদলি করে ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দুই জনে স্কুল পরিচালনা করেন। ১৮১ নং ¯ু‹লে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০ জন থাকা সত্তে¡ও ৫ জন শিক্ষক হতে ২ জনকে বদলি করেন।
অপরদিকে ক্ষমতার দাপট আর অন্যদিকে বদলি বানিজ্যে মহে অন্ধ হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেও পাঠদানে বঞ্চিত করে ১৬০ নং শিশু শিক্ষা নিকেতনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৭ জন। সেখানে ৭ জন শিক্ষক থাকলেও ২০১৯ সালে নতুন করে আরো ৩ জন শিক্ষকের যোগদান করিয়েছেন। এ সব অনিয়মের কারনে বর্তমানে শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এক দিকে যেমন ভেঁঙ্গে পড়েছে তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবী তুলেছেন বঞ্চিত হওয়া স্কুলের অভিভাবকরা।
এদিকে ১১৪নং স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপংকর বদলির জন্য শিক্ষক নেতা রহমান ও পরিমলের হাত দিয়ে শিক্ষা অফিসারকে ২ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। ১৩৬ নং স্কুলের অবসারপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল বাসার বদলির জন্য শিক্ষা অফিসারের হাতে ৬০ হাজার টাকা দেন। ১২২ নং স্কুলের প্রধান শিক্ষক (মামলাধীন) দেলোয়ার বদলির জন্য ৫০ হাজার টাকা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।
৯১ নং খাগড়াদানা স্কুলে মর্জিনা খাতুনের বদলির জন্য ২ লক্ষ টাকা শিক্ষক নেতা আব্দুল্যাহ আল মামুনের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসারের হাতে প্রদান করেন। একদিকে অন্যায় ভাবে শিক্ষক বদলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত করেছেন অন্য দিকে অনেক শিক্ষকের বদলির টাকা ফেরত না দিয়ে এবং অনেক স্কুলের বরাদ্দের চেক না দিয়ে রাতের আধাঁরে পালিয়ে গেছেন শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন।
শিক্ষক বদলি বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষক সমিতির শিক্ষক গোছের নেতারা বদলির টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন। আর উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষ অফিসার শিক্ষক বদলির টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেন।
শিক্ষক বদলির সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামানের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমিনের সাথে মুঠো ফোনে শিক্ষক বদলি বানিজ্যের বিয়য়ে কথা হলে তিনি শ্যামনগরে বদলির বিষয়ে বক্তব্য প্রদানে অনিহা প্রকাশ করেন।