আহাদুর রহমান (জনি): সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতিতে বাজেট বহির্ভূত ৫৯,৩৩,৮১০টাকা অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির কার্য্যকরী পরিষদের (বিগত ২০২০-২০২১) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এ অতিরিক্ত অর্থব্যয় নিয়ে আইনজীবী সমিতির ১৪১জন সদস্য বর্তমান (২০২১-২০২২) কার্য্যকরী পরিষদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য একটি সাধারণ সভা আহবানের আবেদন করেছেন। যা চলতি বছরের ৩১শে মে সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রেজওয়ান উল্লাহ (সবুজ) কর্তৃক গৃহীত হয়।
আবেদনে ১৪১জন আইনজীবীরা উল্লেখ করেন, “ সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদ- ‘বিশেষ বিধি’ দফা (৪)-বাজেট:…… যদি কার্য্যনির্বাহী পরিষদ বাজেট বর্হিভ‚ত বা বাজেটের অতিরিক্ত কোন অর্থব্যয় করেন, তাহলে পরবর্তী ০৩ বৎসর কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করিতে পারিবে না। প্রয়োজনে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হইবে” মর্মে উল্লেখ থাকলেও এবং অত্র সমিতির বিদায়ী কার্য্যকরী কমিটির সম্মানীত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদ্বয় কর্তৃক চ‚ড়ান্ত বাজেট (২০২০-২০২১) বর্হিভ‚ত ও বাজেটের অতিরিক্ত লক্ষ লক্ষ টাকা স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ব্যয় বা অপচয় করিয়া জনাব মোঃ আশরাফ হোসেন- অডিট অফিসার কর্তক গত ইং ১০/০৪/২০২১ তারিখে নিরীক্ষা সম্পাদন পূর্বক যে ‘অডিট রিপোর্ট’ দাখিল করিয়াছেন- উহাতে বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়া স্বত্বেও বর্তমানে দায়িত্ব প্রাপ্ত কার্যকরী কমিটি গঠনতন্ত্র লংঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে বলবৎ ও কার্য্যকরী গঠনতন্ত্র মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে কোন পদক্ষেপ বা সাধারণ সভা আহবান না করায় গঠনতন্ত্রের বিধানাবলী অনুসরন পূর্বক আপনার/আপনাদের বরাবর এতদ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহনের নিমিত্তে সাধারণ সভা আহবানের আবেদন পেশ করিতেছি।
প্রকাশ থাকে যে, অত্র সমিতির গঠনতন্ত্রের তৃতীয় অনুচ্ছেদ -“সমিতি পরিচালনা” এর ১০(গ)(৭) দফায় উল্লেখ আছে যে, “সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের সমিতির অর্থের উপর সকল প্রকার বৈধ নিয়ন্ত্রন থাকিবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়মিত ভাবে সমিতির হিসাব-নিকাশ নিরীক্ষণ করিবেন। সমিতির অর্থ ও সম্পদ অপব্যবহার হইলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ দায়ী থাকিবেন।” কিন্তু বিগত কার্য্য নির্বাহী কমিটি কৃর্তক ক্ষমতা বা দায়িত্ব গ্রহনের কয়েক মাসের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ পদ শূন্য হয়- তথাপিও গঠনতন্ত্রের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ এর ৪(গ) দফা অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করিয়া সম্মানীত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদ্বয়ের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকিং লেনদেন পরিচালনা করিয়া আসিতেছেন।”
ওই সাধারণ সভা আহবানের আবেদনের সাথে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল দাখিলকৃত অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তৎকালীন কার্য্যকরী পরিষদ কর্তৃক ৫৯,৩৩,৮১০টাকা বাজেট বর্হিভূত ব্যয় হয়েছে। এদিকে যদি চ‚ড়ান্ত বাজেটের উল্লেখিত দফগুলোর অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয় সে ক্ষেত্রে একটি সম্পূরক বাজেটে তা সমন্বয় করতে হয়। যা এক্ষেত্রে করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন আইনজীবীরা। এছাড়াও খসড়া উল্লেখ না করে চ‚ড়ান্ত বাজেটে দুটি দফা পাশ করা হয়েছে। যা এই অভিযোগ ও অডিট রিপোর্টে বাজেট বার্হিভ‚ত ব্যয়ে উল্লেখ আছে।
অডিট রিপোর্টে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেট বর্হিভ‚ত যে সব খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে:
* পানির ফোয়ারা নিম্যাণ ব্যয় বাবদ ৪,৪১,১৮৭ টাকা;
* শিক্ষা সফর ব্যয় বাবদ ১,৪৫,৪৩৫টাকা;
* সমিতির যাবতীয় স্টেশনারী মালামাল ক্রয় বাবদ ১৭,৪৯২টাকা;
* আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ৪,৩৬,১২১ টাকা;
* সমিতির সম্পদ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন (রং, প্লাস্টার,সংস্কার ইত্যাদি) বাবদ ২,২৯,০৪০ টাকা;
* ২নং বিল্ডিং এর ৪র্থ তলার নির্মাণ (ইট, বালি, সিমেন্ট ক্রয় ও মিস্ত্রী মজুরী) খরচ বাবদ ১০,৬৭,৪৭৮ টাকা (সরকারি অনুদান বর্হিভ‚ত);
* লিফট নির্মান ব্যয় ৩২,৪৯,৬৩৪ টাকা;
* নির্বাচন অনুষ্ঠান বাবদ খরচ (আপ্যায়ন) ৫৬,২৫০ টাকা;
* বিবিধ খরচ ২,৯১,১৭৩ টাকা।
বিগত (২০২০-২০২১) কার্য্যকরী পরিষদের এ বাজেট বার্হিভ‚ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির বর্তমান (২০২১-২০২২) কার্য্যকরী পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন জানিয়েছিলেন, ‘আইনজীবীদের আবেদন পেয়েছি। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাধারণ সভা আহবান করা হবে। যা সিদ্ধান্ত হওয়ার তা সাধারণ সভাতেই সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।’ তিনি আরো জানান ‘সমিতির নিয়মানুযায়ী অডিট রিপোর্ট হবে দুই ধরনের যা ১) অডিট অফিসার কর্তৃক নিরীক্ষা সম্পাদন। ২) অভ্যন্তরীন যা সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে নিরীক্ষা সম্পাদন হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত শুধু মাত্র প্রথমটিই হয়েছে। এবার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অভ্যন্তরীন কমিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিরীক্ষা সম্পাদনের জন্য।’
এই বিষয়ে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রেজওয়ান উল্লাহ (সবুজ) সাতনদীকে বলেন, ‘সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন মাত্রই শিথীল হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন এত সদস্য নিয়ে সাধারণ সভা আহবান করা যাচ্ছে না। তবে দ্রæতই সাধারণ সভা আহবান করা হবে।
বাজেট বর্হিভ‚ত অর্থব্যয়ের অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির কার্য্যকরী পরিষদের (বিগত ২০২০-২০২১) সভাপতি এ্যাড. এস এম শাহ আলম সাতনদীকে জানান, ‘আমি অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নই। আর এধরনের অভিযোগ উঠে থাকলে তাও মিথ্যা। আইনজীবী সমিতির ২০২০ ও ২০২১ অর্থবছরে বাজেট বর্হিভ‚ত কোন ব্যয় হয়নি। যা হয়েছে সব বাজেটের মধ্যেই হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো আমি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন করলে প্রতিপক্ষরা জয়লাভ করবেনা। তাই বিরোধী পক্ষ আমাকে হয়রানি ও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য এ কাজ করেছে।’
সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির কার্য্যকরী পরিষদের (বিগত ২০২০-২০২১) সাধারন সম্পাদক এ্যড. তোজাম্মেল হোসেন তোজামের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, ‘আমি চাই এরকম একটি রোল মডেল প্রতিষ্ঠানের শতভাগ জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হোক। যার সুফল সকল আইনজীবীরা ভোগ করবে।’
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সমিতির ৫৯,৩৩,৮১০টাকা বাজেট বর্হিভ‚ত ব্যয় হয়েছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ সভা আহবান পূর্বক আমাদের আবেদনে উল্লেখীত দাবী সমূহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আবশ্যক। তাতে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস জনিত কারণে মানবেতর জীবন যাপন করা আইনজীবীরা উপকৃত হবে।’
আইনজীবী এ্যাড. এখলেছার আলী বাচ্চু সাতনদীকে জানান, ‘এ ধরনের অপব্যয় মেনে নেওয়া যায়না। আইনজীবী সমিতির স্বার্থে দ্রæত এর সমাধান হওয়া দরকার।’
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন সাধারন সভা আহবানের আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ১০০জন সদস্যের স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন করতে হয়। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাধারণ সভার আহবান করা হয়নি।