-
ভারতীয় ট্রাক থেকে চাঁদা বন্ধ করে দিলেও অদৃশ্য শক্তির বলে চাঁদাবাজি অব্যাহত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে মঙ্গলবার বিকালে কয়েক ঘন্টা চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও গত দুই দিন ধরে ভোমরা স্থল বন্দরের জিরো পয়েন্টে ভারতীয় আমদানীজাত পন্যবাহি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে। ট্রাক প্রতি ভারতীয় দুইশো রুপি হারে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নেপথ্যের গডফাদার কে? অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে অটল থাকলেও গুটি কয়েক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে ও পরে সাতক্ষীরা ২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু ভোমরা স্থল বন্দর থেকে জঞ্জাল মুক্ত করার ঘোষণা দিলেও তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২১ জুন ভোমরা স্থল বন্দরে ভারতীয় আমদানীজাত পণ্যবাহি ট্রাক থেকে দুইশো রুপি হারে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়। ঐদিন ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা চাঁদাবাজির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করলে ৩ ঘন্টা আমদানী-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যহত হয়। এই ধরনের চাঁদাবাজির কারনে অভ্যন্তরীন বাজারে আমদানীজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। ভোমরা আমদানী-রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন আমদানীজাত পণ্যবাহি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবীতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করলেও কোনো কাজ হয়নি। যার কারনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ব্যবসায়ীরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে চাঁদা আদায় কাজে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কর্মচারীকে জিরো পয়েন্ট থেকে উঠিয়ে দেয়। ফলে ঐ দিন বিকালে কয়েক ঘন্টা চাঁদাবাজি বন্ধ থাকে । কিন্তু বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে যথারীতি চাঁদাবাজি শুরু হয়। গত বুধবারেও ১৫৩টি আমদানীজাত ভারতীয় পণ্যবাহি ট্রাক থেকে ৩০ হাজার ৬ শত ভারতীয় রূপি চাঁদা আদায় করা হয়েছে। প্রকাশ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা আদায় অব্যাহত থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবারও ২১৪ টি ভারতীয় ট্রাক থেকে ভারতীয় ৪২৮০০ রূপি চাঁদা আদায় হয়েছে। কর্তব্যরত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের সামনেই বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা আদায় করা হলেও আজও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের সম্ভাবনাময় ভোমরা স্থল বন্দরে বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। কিন্তু গত ৩০-০৫-২০২৩ তারিখে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের স্মারক নং সম্বলিত চিঠি দিয়ে ভারতীয় আমদানীজাত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে দুইশো রুপি হারে চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এধরনের চাঁদাবাজীর প্রতিবাদে ভোমরার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এসোসিয়েশন সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করে। গত ২১-০৬-২০২৩ তারিখ থেকে বন্দরের জিরো পয়েন্টে বসে ভারতীয় ট্রাক থেকে দুইশো রুপি হারে চাঁদা আদায় শুরু করলে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা প্রায় ৩ ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করলে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম ব্যহত হয়। একপর্যায়ে আমদানীকারকরা ট্রাক প্রতি দুইশো রুপি হারে চাদা দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা বসিরহাট ট্রান্সপোর্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে ভোমরা স্থল বন্দরে চাদাবাজির বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগ দাখিল করে। ভোমরাস্থ আমদানী-রপ্তানিকারক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু ভোমরা স্থল বন্দরের অনিয়ম, দূর্নীতি, চাঁদাবাজি ও জঞ্জালমুক্ত করার ঘোষণা দিলে সাধারন ব্যবসায়ীরা কিছুটা মনোবল ফিরে পায়। যার ফলশ্রুতিতে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, ওহিদুল ইসলাম, সাবেক আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল ইসলামের নের্তৃত্বে সাধারন ব্যবসায়ীরা বন্দরের জিরো পয়েন্টে গিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কর্মচারীকে চাঁদা আদায় করতে নিষেধ করেন। কিছু সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করে চলে আসেন।
প্রসঙ্গত: ট্রাক প্রতি দুইশো রুপি হারে প্রতিদিন প্রায় দুইশো আমদানিজাত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের মোট পরিমান দাঁড়ায় ৪০,০০০ রুপি। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা ভারতীয় ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হলেও এই অর্থ কোথায় যায় তা কেউ জানে না।
সর্বশেষ খবর নিয়ে জানা গেছে বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবনে ও সাতক্ষীরা ২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশুর উপস্থিতিতে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে চাঁদাবাজির টাকা কোথায় কোথায় ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে আলোচনায় স্থান পায়। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের এক শীর্ষ নেতা বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখিন হন। এক পর্যায়ে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোমরা বন্দরে চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।