নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুরে জলাবদ্ধতা দূর ও দুই শতাধিক পরিবারকে সহযোগিতা করতে গিয়ে চরম মিথ্যাচার ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস,এম শহিদুল ইসলাম।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলী সরদার এর ছেলে হাবিবুর রহমানের বাড়ির পাশ দিয়ে শত বছরের অধিক সময় ধরে সরকারী খাস জমির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো। কিন্তু বছর দুই আগে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে ও মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে হাবিবুর সরকারি জমির উপর দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করে। পাশাপাশি প্রাচীরের পাশে থাকা পানি সরানোর ড্রেনে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেয়। এছাড়া রাস্তায় নির্মিত কালভার্টের মুখে মাটি দিয়ে উচু করে পানি সরানোর পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এতে করে একটু বৃষ্টি হলেই বিপাকে পড়ে দুই শতাধিক পরিবার। সৃষ্টি হতে থাকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। মানুষ হয়ে পড়ে নির্বিকার। এসব ঘটনাকে পুঁজি করে সরকারী জায়গা নিজ আয়ত্বে রাখতে ইউপি চেয়ারম্যান সহ গ্রামবাসীকে বিবাদী করে হাবিবুর বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন কেস ৮৭৯/১৯ ও সদর সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ১৫৪/১৯ নং কেস দাখিল করে। ইতিপূর্বেও সরকারী খাস জমিতে প্রাচীর নির্মাণের সময় স্থানীয় লোকজন সহ এক প্রকৌশলী ও চেয়ারম্যান বাঁধা দিলে তাদের নামেও একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। সে মামলা থেকেও সবাই অব্যাহতি পেয়েছে।
ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের নুর ইসলাম গাজী, কাশেম, আব্দুল মালেক সহ কয়েকজন জানান, হবিবুর সরকারি জমি দখল করে নিজের স্বার্থে এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারকে পানিতে হয়রানি করে যাচ্ছেন। তার জমি নিয়ে ইতোমধ্যে তিন বার মাপ-জরিপ করা হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক সার্ভেয়ার স ম জালাল উদ্দিন মন্তব্য করে লিখেছেন ৪৭৪৮ দাগের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ ৪৭১৮ দাগ যা খাস। সে অনুযায়ী তিনি একটি স্কেচ ম্যাপ প্রস্তুত করে দেন।
গ্রামবাসীরা আরও জানায়, সম্প্রতি বর্ষা মৌসুমের ভারী বৃষ্টিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারন করে। এতে করে দুই শতাধিক পরিবার পানিতে তলিয়ে গিয়ে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। বাড়ী-ঘর, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলের খামার ও কবরস্থান সবখানে পানি থৈ থৈ করছিল। এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গ্রামবাসী গণ দরখাস্ত দেয়। এসব ঘটনা আঁচ করতে পেরে হাবিবুর কৌশলে সাতক্ষীরা থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনাটি তদন্ত করতে সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হুসেন ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস,আই তন্ময়কে নির্দেশ দেন।
তদন্তকালে এস,আই তন্ময় পুরো জলাবদ্ধতা এলাকা ঘুরে দেখে এলাকার শত শত মানুষের দুঃখ-দূর্দশা দেখতে পান। এ সময় তিনি পানি সরানোর জন্য সরকারী জায়গার উপর দিয়ে ড্রেন কেটে পানি সরানোর জন্য গ্রামবাসীকে বলেন। গ্রামবাসী ড্রেন কেটে পানি সরানোয় আবারও ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন হাবিবুর।
এই ঘটনায় হাবিবুর চেয়ারম্যানসহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে গত ৪ আগষ্ট একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর তুলে ধরেন, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না সম্পূর্ণ গায়ের জোরে খাস জমির উপর দিয়ে ড্রেন না কেটে আমার রেকর্ডীয় সম্পত্তির উপর প্রাচীরের গাঁ ঘেসে রাস্তার পশ্চিম পাশের্^ গভীর করে গর্ত খুড়ে ড্রেন তৈরি করেছে। গভীরভাবে ড্রেন করায় আমার প্রাচীরটির মাটি ধ্বসে ভেঙ্গে পড়বে।
এই সংবাদ সম্মেলনের পরদিন ৫ আগষ্ট শতাধিক গ্রামবাসী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে হাজির হয়ে হাবিবুরের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে গ্রামবাসী বলেন, বিগত ১০০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমের পানি আব্দুল মালেকের বাড়ির সামনের সরকারি ড্রেন দিয়ে নিস্কাশিত হয়ে আসছে। এ যাবত কখনো আমাদের বসতবাড়ি এমনকি বাড়ির উঠানেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি একই এলাকার মৃত. আহম্মদের পুত্র হবিবুর রহমান সরকারি জমি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করে। এতে করে সকলেই আমরা স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিলাম।
ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস,আই তন্ময় জানান, সরেজমিনে নিরপেক্ষ তদন্ত করে গ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা হয়েছে। পানির কারনে মানুষ অবর্ননীয় কষ্ট ভোগ করে আসছিল। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
হাবিবুর জানান, রাস্তার পাশের্^ খাস জায়গা থাকা সত্তে¡ও শুধু মাত্র আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য মাটি কেটে ড্রেনটি করেছে। আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি আওয়ামী লীগ করি। আর ওরা সব বিএনপি জামায়াতের লোক। তারা আমাকে ক্ষতি করতে মরিয়া।
ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস,এম শহিদুল ইসলাম জানান, আমার জন্মেরও আগে সরকারি জায়গার ড্রেন দিয়ে পানি সরে আসছিল। কৌশলে সেখানে হাবিবুর সরকারী জায়গা দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করে ড্রেন বন্ধ সহ কালভার্টের মুখে মাটি ভরাটে উচু করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসীরা পানি সরিয়েছে আর দোষ দিচ্ছে আমাকে। আমার বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাবিবুর। আপনারাই বলুন দুই শতাধিক পরিবারকে সহযোগিতা করা কি আমার অপরাধ?