জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে বাসাবাড়িতে আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক: জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছয় বছরের এক শিশুকে নির্মম ভাবে পেটানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়াও দিবাগত রাত ১:৩০মিনিটে ওই শিশুদের বাসাবাড়িতে অগ্নি সংযোগেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নে বৈচনা গ্রামে ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ঘরে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের বৈচনা গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে আবুল হোসেনের সাথে একই গ্রামের গ্রাম ডাক্তার আব্দুস সামাদ, গোলাম রসুল, মোছাব্বির হোসেন, রবিউল ইসলাম, তামিম হোসেনসহ তার পরিবারের লোকজনের সাথে। সম্প্রতি আবুল হোসেন তার বাসাবাড়ি পাঁচিল দিচ্ছিলো। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রাম ডাক্তার আব্দুস সামাদ তার বাড়ির মহিলাদের শনিবার লেলিয়ে দেয়। কুড়াল, শাবল, ধারালো দা সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা আবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা করে। সম্প্রতি কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, তামিম হোসেন শাবল দিয়ে বাড়ির পাঁচিল ভাঙছে। তাকে সহায়তা করছে কয়েকজন মহিলা। তাদের নিবৃত করে আবুল হোসেন বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র আবুল হোসেন কেড়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়। তখন মহিলারা চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবারও তারা ফিরে এসে আবুল হোসেনের স্ত্রীকে মারপিট করতে থাকে। আবুল হোসেনের ৬ বছরের শিশু সন্তান আব্দুল সালাম(৬) মাকে বাঁচাতে গেলে নির্মম ভাবে তাকে পেটাতে থাকে মোছাব্বির হোসেনের স্ত্রী খাদিজা খাতুন। আবুল হোসেন তার শিশু সন্তাকে বচাঁতে গেলে তাকেও মারপিট করে তারা। পুরো পরিবারকে একতরফা পিটিয়ে তারা চলে যায়। আবুল হোসেন তার গুরুতর আহত শিশু সালামকে ও তার স্ত্রীকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে নিজেও চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। দিবাগত রাত দেড়টার সময় ডাক্তার আব্দুস সামাদের হুকুমে দখলে রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য তারা রাতে আবুল হোসেনদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। আগুনে আবুল হোসেনের রান্নাঘর, বিচালীগাদা ও রান্না করার জন্য জমিয়ে রাখা কাঠ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই সাথে পুড়ে যায় তিনটি আমগাছ ও একটি তাল গাছ। আগুন লাগার খবর পেয়ে আবুল হোসেনর ভাই হাবিবুল্লাহ ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে সব পুড়ে শেষ।

শিশু সালাম নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে মোছাব্বিরে স্ত্রী খাদিজা।
প্রত্যক্ষদর্শী নাইট গার্ড আব্দুর রহিমের ছেলে মোহর আলী জানান, রাত দেড়টার দিকে ওই স্থানে টর্চের আলো জ্বালাতে দেখি। দূরে থাকায় সে ব্যক্তিকে চিনতে পারেনি। ওই আলো জালিয়ে সে ব্যক্তি গ্রামের মধ্যে চলে যায়। সে চলে যাওয়ার সময়ই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করলে আমি বাঁশি বাজিয়ে ও চেঁচিয়ে গ্রামের লোকজন খবর দেই। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়।
আবুল হোসেন বলেন তারা আমার প্রাচীর ভাঙতে আসলে আমি বাধা দেই। ওরা কুড়াল, শাবল, রডসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে। তখন আমরা তাদের নিবৃত করলে তারা চলে যায়। একটু পর আমার মেজ চাচার ছেলের বউ ঘুরে এসে আমার ছেলেকে এমন মারপিট করে যে তাকে এখন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা লাগছে। তারা আমাদের মারপিট করে উল্টো মামলা করে। আমি নিজের ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করি। রাত দেড়টা দুইটার দিকে আমার কাছে ফোন আসে যে আমার বাসায় আগুন লাগিয়ে গেছে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। শুনেছি ওরা আবার আমার বাড়ির পাঁচিল ভাঙবে। তাই ঘর সরাতে না পেরে আগুন দিয়ে পরিষ্কার করে।
আফসার আলীর ছেলে আমিনুর ইসলাম বলেন আমাকে নাইট গার্ড বাশিঁ দিয়ে নাম ধরে ডাক দিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। উঠে পানি দিয়ে। কোন ভাবেই আগুন নিভাতে পারছিলামনা। পরে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন আমি নাইট গার্ডকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমিকি কিছু দেখেছিলে। তিনি আমাকে জানান আগুন ধরার কিছুক্ষণ আগে লাইট মারছিলো সে চলে যায়ার কিছুক্ষণ পরে আগুন জ্বলে উঠে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায় এ ঘটনায় মামলা প্রস্তুতি চলছে।