সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি প্রতিবেদক : আশাশুনির দয়ারঘাট-বলাবাড়িয়ায় রাস্তার জন্য দূর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ।২৫ বছর ধরে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত ৬৫০ মিটার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন ওয়াপদার রাস্তাই নেই। প্রায় ১০ বছর ধরে চলেছে খেয়া পারাপার। এরপর ১৫ বছর ধরে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু বাঁধ দিয়ে। আম্ফানে এর ভেতর ৪ টি পয়েন্ট ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় শতাধিক মৎস্য ঘের। প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর।সরজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কি.মি. দুরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোন বেড়িবাঁধ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ মণ্ডল জানান- ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড স্লুইচগেট সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদী ভাঙ্গনে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নও প্লাবিত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবত জোয়ার-ভাটা চলায় স্লইচগেট সংলগ্ন এ এলাকায় গভীর খালের সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর পর প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘুরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেয়া হয়। সেই থেকে এ খালে খেয়া-পারাপার হয়ে বলাবাড়িয়া, হাঁসখালী, গাইয়াখালী ও এর আশপাশের মানুষ আশাশুনি সদরে যাতয়াত করেছেন। এরপর ২০০৫ সালে প্রায় ১০ বছর পর মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ওই ২ হাজার বিঘাতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যবধি ওয়াপদা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আম্ফানের জলোচ্ছ্বাসে দয়ারঘাট-জেলেখালী গ্রামের বেড়িবাঁধের মত নিচু এ বাঁধ ছাপিয়ে ও ভেঙ্গে হু হুু করে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে শতশত ছোট ছোট মৎস্যঘের তলিয়ে যায়। উক্ত ৬৫০ মিটারের মধ্যে আরও ৪ জায়গায় ভেঙ্গে জোয়ারভাটা চলতে থাকে। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতয়াত দুরহ হয়ে পড়ে। কোন রাস্তা না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল, রোগীসহ নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতয়াতে সীমাহিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আম্ফান ঝড়ের ৩৯ দিন পর সেই বাঁধ সম্পন্ন হয়। এরপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তীর উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উক্ত ৬৫০ মিটার রাস্তা নির্মানের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। সে মোতাবেক পাউবো’র কর্মকর্তারা মাপ-জরীপ করে লিখেপড়ে নিয়ে গেলেও কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
এই ৬৫০ মিটার মৎস্যঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগনের ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতয়াতের জন্য কোন সরকারি রাস্তা নির্মান করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কি.মি. দুরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতয়াতের কোন সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই। অবহেলিত এই গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়েছে ২০২০ সালে। বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ এ গ্রামের পাশাপাশি যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়িচাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি এ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারেনা। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলে-মেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন শুধু একটি সরকারি রাস্তার জন্য।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গোলাম রাব্বীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন- ওই সাড়ে ৬শ মিটার রাস্তার নির্মানের লক্ষে নকশা ও অর্থ বরাদ্দের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উর্ধতন কর্তপক্ষ থেকে আমাদের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমি আবারও এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে চেষ্টা করব মুলবাঁধটি নির্মান করে এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব করতে।
আম্ফানে ভেঙ্গে যাওয়া দয়ারঘাট গ্রামের রিং বাঁধ সরিয়ে মুল বাঁধ টেঁকসই ভাবে নির্মাণ ও দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত স্থায়ী ওয়াপদা রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আশাশুনিতে একটি রাস্তার অভাবে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ
পূর্ববর্তী পোস্ট