আহাদুর রহমান জনি: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার এইচ,এন,এস,কে,টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবারও অবৈধভাবে দু’টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন্ করার প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ থাকায় এবং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকায় আগামীকাল ১৪ মার্চ তারিখে উক্ত সভাপতির অধীনে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই পূর্বে স্থগিত হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া আবারও যাতে গোপনে সম্পন্ন হতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সচেতন এলাকাবাসী।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আশাশুনি হাড়ীভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গত ০৪/৮/২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে নানা অনিয়ম করা হয়েছে বলে ইতোপূর্বে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয় এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ আগস্ট তারিখে কমিটি গঠন ও কমিটির সভাপতি নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তদন্ত করেন।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৩১/৮/২০২০ তারিখে জেশিঅ/সাত/২০২০/৪৪২ নং স্মারকের উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্টে কমিটির সভাপতি একজন সরকারি কলেজের প্রভাষক। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৮(৩) ধারায় লিখিত আছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া সভাপতি হতে পারবেন না। ফলে ৮(০৩) ধারা লঙ্ঘন। তাছাড়া বর্তমান পরিচয় গোপন করে বাড়ির ব্যক্তিগত ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি সভাপতি পদ অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তথাপি গত ০৯/১০/২০২০ তারিখে উক্ত প্রশ্নবিদ্ধ কমিটির মাধ্যমে স্কুলের সহকারি গ্রন্থাগারিক ও নৈশ প্রহরি পদে নিয়োগ দানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। তখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ হলে কর্তৃপক্ষ উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে।
ইতোমধ্যে উক্ত দু’টি পদের নিয়োগ সার্কুলারের মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ায় গত কয়েকদিন পূর্বে অতি গোপনে আবারও নিয়োগ সার্কুলার দিয়ে আবারও সেই প্রশ্নবিদ্ধ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবিধানমালা ২০০৯ লঙ্ঘন করে বর্তমান সভাপতি দায়িত্বে আছেন। তারা বলছেন প্রবিধানমালার ৮(৩),৩৮ ধারা লঙ্ঘন মানে ৩৬ ধারা লঙ্ঘন। আর ৩৬ ধারা লঙ্ঘন হলে রেজুলেশন বাতিল হয় এবং রেজুলেশন বাতিল হলে কমিটির বৈধতা থাকে না। তাই এই কমিটির মাধ্যমে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন সমাজসেবক বলেন, গতবার এই নিয়োগ বন্ধ ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অতি গোপনে আগামী ১৪ মার্চ উক্ত দু’টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে। তাছাড়া এই দু’টি পদে কমিটি কর্তৃক পূর্বেই মনোনীত ব্যক্তিদরেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। এতে স্কুলের অভিভাবক, অন্যান্য নিয়োগ প্রার্থী সহ সচেতন এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করা দরকার।
এ ব্যাপারে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসুকেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। তবে ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য মনোরঞ্জন সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,১০/১৫ দিন আগে পূনরায় নিয়োগ সার্কুলার হয়ে গেছে। নিয়োগ পরীক্ষা আছে তবে কবে তা সঠিকভাবে জানি না। তবে আমার কাছে স্বাক্ষর নিতে এসেছিল, আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। তাতে বোঝা যায় যে নিয়োগ পরীক্ষা আছে। তবে এ ব্যাপারে তিনি কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে বিস্তারিত জানার জন্য বলেন।
এ ব্যাপারে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগামী ১৪ তারিখে সহকারী গ্রন্থাগারিক ও নৈশ প্রহরি পদে নিয়োগ পরীক্ষা আছে। আশাশুনির বদরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আগে কমিটির সভাপতির বৈধতা নিয়ে সমস্যা ছিল তাই নিয়োগ বন্ধ ছিল। এখন সভাপতি বৈধ তাই নিয়োগ দিতে আমার কোন সমস্যা নেই।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ’র সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে বলেন, আমি এখন ঝামেলায় আছি, পরে ফোন করেন।
নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানা নেই, এ ব্যাপারে আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি।
তবে বিষয়টি যাই হোক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ থাকায় এবং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকায় পূর্বে স্থগিত হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামীকাল ১৪ মার্চ তারিখে আবারও যাতে গোপনে সম্পন্ন হতে না পারে তথা উক্ত সভাপতির অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে বৈধ কমিটির মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সচেতন এলাকাবাসী।