মুরাদ হোসেন বিপ্লব, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম পতেঙ্গার মাদক সম্রাট গাভী ইলিয়াছের অপকর্মের ইতিকথা। গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে বিগত সময় যমুনা টিভির অপরাধ অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান “ইনভেস্টিগেশন ৩৬০”তে তৈলে তৈলাক্ত শিরোনামে তেল চুরির হোতা হিসেবে সংবাদ প্রচার হয়েছিলো। অন্যদিকে অসংখ্য অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকায় ইলিয়াছের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক সাতনদীসহ একাধিক দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ধারাবাহিকভাবে ইলিয়াছের অপকর্মের কথা প্রকাশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী এই সংবাদটি প্রচার করছি। অনুসন্ধানে আমাদের একাধিক প্রতিনিধিরা গাভী ইলিয়াছের অপরাধ জগতের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক তার মুখোশ উন্মোচিত করার চেষ্টা করেছে। তার সাথে স্থানীয় কথিত কিছু সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতা ও পতেঙ্গা থানার অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অসংখ্য সংবাদ প্রচার হওয়ার পরও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা এই সংবাদ প্রকাশে আগপর্যন্ত নেননি। পাঠকদের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম পতেঙ্গার গাভী ইলিয়াছের অপকর্মের ইতিকথা তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র। কে সেই গাভী ইলিয়াছ তার আসল পরিচয় কি জেনে নিন, চট্টগ্রামে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী রিয়াজউদ্দিন বাজারের মনজু সওদাগর ওরফে কানা মনজুর প্রধান সহযোগি গাভী ইলিয়াছ বস মনজুর ইয়াবা রাজত্ব পুরোটাই দখলে নিয়েছে। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ধর্ষন, মানুষ হত্যা, সাগরে ডাকাতি, তেলের চোরা কারবারি সহ এমন কোন অবৈধ ব্যবসা নাই যা গাভী ইলিয়াছ করে না। তার জোড়জুলুম ও অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। পুলিশে কিছু অসৎ কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সব সময়ই পাড় পেয়ে যায়। গাভী ইলিয়াছের নামে মাদক, হত্যা, চাদাবাজিসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার ভাই ওসমান গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের পাশাপাশি ওসমান আমাদের প্রতিনিধিদেরকে বলেন যে, গাভী ইলিয়াছ আমার আপন ভাই হওয়ার সত্তে¡ও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করে আসছি। সে একজন চিহ্নিত জলদস্যু সাগরে তার ডাকাত বাহিনীরা নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। আমি নিজেই তার একটি ডাকাত বাহিনীর ট্রলার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছি। জলদস্যু হিসেবে কোসগার্ডের কাছে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রযেছে। যার প্রেক্ষিতে কোস্টগার্ড তাকে আজীবনের জন্য সাগরে যাওয়ার নিষেধাঙ্গা দিয়েছে। আমিসহ অসংখ্য প্রতিবাদকারীররা গাভী ইলিয়াছের বিভিন্ন অত্যাচারের শিকার এবং ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। অন্যদিকে শান্তিপ্রিয় অসহায় জেলেরা তার অত্যাচারের শিকার যেসব জেলেরা গাভী ইলিয়াছ কর্তৃক নির্যাতনে শিকার হয়েছে তাদের মুখোমুখি হয়েছে আমাদের প্রতিনিধিরা গাভী ইলিয়াছের জলদস্যুদের হাতে কিভাবে নির্যাতিত হয়েছে তার বিবরণ দিতে গিয়ে নির্যাতিত জেলেরা কেঁদে উঠে তার বর্ণনা শুনে গাঁ শিউরে উঠে।
তার ভাই আলাউদ্দিনের নামে ৬ টি, তার সহযোগি হানিফের নামে ৩টি, জাহাঙ্গীরের নামে ৪টি এবং রোস্তমের নামে একটি মামলা রয়েছে।
যেভাবে শূণ্য থেকে পূর্ণ ইলিয়াছ: ইলিয়াছ এক সময় বার্মা থেকে মনজুর ইয়াবার চালান নিজের ট্রলারে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতো এবং বিজয় নগরের টোকাই ফারুকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতো। ওস্তাদ মনজু র্যাবে হাতে নিহত হওয়ার পর ইলিয়াছ নিজেই ইয়াবা সহ অপরাধ জগতের গডফাদার বনে যান। ইলিয়াছ ১৯৯১ সালে মোল্লা ডেইরি ফার্মের মালিক হাসেম মোল্লার দায়ের করা চাদাবাজি মামলায় ৪মাস জেল হাজতে থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। একই বছর অপর এক ব্যবসায়ী দক্ষিন পাড়ার এখলাছ মিয়ার ছেলে জাফরের দোকানে ডাকাতি করার সময় জাফরকে ক্রিচ দিয়ে কুপিয়ে জখম করলে জাফরের দায়ের করা এট্যাক টু মার্ডার মামলায় দীর্ঘ সাতবছর জেল খাটে। পরে সে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে বন্দর টিলার মো: জসিম (প্রকাশ লুঙ্গি জসিম)কে পতেঙ্গা দক্ষিনপাড়া কোনার দোকানের মোড়ে ধারালো ছুরি দ্বারা তার ভাই জাহঙ্গীরেরসহ একাধিক সহযোগী নিয়ে নৃশংস্বভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই মামলা তার ভাইয়েরাসহ সেই দুই বছর জেল খাটে। ২০১১ সালে থেকে সীপোর্ট এলাকা থেকে বিদেশি মদ পাচারে মধ্য দিয়েই অবৈধ মাদক ব্যবসার সূত্রপাত ঘটলেও এখন সে চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া ২০১৩ সনে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত নয়াবাজারের জাহেদুল ইসলাম আলোর একান্ত ব্যবসায়িক পার্টনার ও মাদক ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আয় করেছে। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ট্রলার দিয়ে সাগরে ডাকাতি করার সময় কোস্টগার্ডে কাছে হাতেনাতে ধরা পরে সেই মামলায়ও সে কারাভোগ করে বলে জানাযায়। আরও তথ্য সুত্র জানায় যে, বিগত দুই-তিন বছর পুর্বে তার একটা বড় ট্রলার দিয়ে সাগরে ডাকাতি করার জন্য অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ২৬ জন ডাকাতকে সাগরে পাঠালে ঐ সময় ট্রলি জেলেদের সাথে সংঘর্ষের সময় ডাকাতদের ট্রলারটি ডুবে গেলে ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জন ডাকাত মারা যায়।
গাভী ইলিয়াছ ও তার ভাই আলাউদ্দিনের বিদেশী ব্রান্ডের মদ নকল করে তৈরি করার কারখানা ছিলো । সেই নকল মদ খেয়ে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই দক্ষিন পতেঙ্গা মধ্যমপাড়ার কবির ছেরাংয়ের ছেলে মো: সোলায়মান (৩০) মর্মান্তিক ভাবে মারা যায়। ২৫ নভেম্বর ২০১৬ সালে একই এলাকার হোসেন আহাম্মদের ছেলে লোকমান হোসেন (২৭) ঐ নকল মদ খেয়ে মারা যায়। ২৫ জুলাই ২০১৬ সালে দক্ষিন পতেঙ্গার দক্ষিনপাড়ার শফি চৌধুরীরর ছেলে মোজাফ্ফর হোসেন ও শেখ আহাম্মদের ছেলে দেলোয়ার হোসেনও একই ভাবে মারা যায়। গত ২ নভেম্বর ২০১৮ সালে গাভী ইলিয়াছের ভাই আলাউদ্দিনের কাছে ও তার অপর ভাই রোস্তম ও তার ম্যানেজার নুরুল হুদার ঘর থেকে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধার করেছিলো। ঐ মামলায় আলাউদ্দিন কারাগারে গেলেও অপর আসামী রোস্তম ও নুরুল হুদা পলাতক ছিলো বলে জানাযায়। ইলিয়াছ দক্ষিন পতেঙ্গার ৪১ নং ওয়ার্ডের নাগর আলীর নতুন বাড়ীর গাভী হোসেনের ছেলে।
এদিকে প্রশাসনের নজর এড়াতে গাভী ইলিয়াছের ২০ জনের মত বিশ্বস্থ র্সোস রয়েছে। যাদের পিছনে তার প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ হয় বলে জানা যায়। গাভী ইলিয়াছের অবৈধ মাদক এবং কালোবাজারির মাধ্যমে অর্জিত টাকার পাহাড়ের নীচে চাঁপা পরে আছে সমাজপতিগণ।
এদিকে ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ইলিয়াছের অবৈধ আয়ের বর্তমান অর্থের পরিমাণ হবে অর্ধশত কোটি টাকার উপরে। এছাড়া অবৈধ অর্থে নির্মিত বহুতল একাধিক ভবন রয়েছে তার মধ্যে বিজয় নগরে ২টি নতুন বাড়ি এবং পৈত্রিক ভিটায় ৪র্থ তলা বিশিষ্ট আরও একটি নতুন বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া তার ২টি প্রাইভেট কার, ২টি কভারভ্যান এবং ৪০শতক জমিসহ তেলবাহী একটি জাহাজের মালিক। যার আনুমানিক মূল্য হবে ২০ কোটি টাকারও অধিক। এছাড়া নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে গাভী ইলিয়াছ।
গাভী ইলিয়াছের অন্ধকার জগতের বিষয় ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুর নুর অভিযোগ করে বলেন, গাভী ইলিয়াছ পতেঙ্গায় এমন কোন কাজ নেই সে করে নাই একজন সাধারণ সিএনজি চালক থেকে শত কোটি টাকা মালিক হয়েছে। গাভী ইলিয়াছ যে সময় সিএনজি চালাতো তার সিএনজি দিয়ে নিয়মিতভাবে পতেঙ্গায় মদ, বিয়ার পরিবহনের পাশাপাশি সিএনজিকে ছিন্তাইর কাজে ব্যবহার করত। তার একটি ছিন্তাইকারী গ্রæপ ছিলো। ঐ ছিন্তায়কারীরা এয়ারপোর্ট এলাকায় বিদেশ থেকে আগত প্রবাসিদের মালামাল ছিন্তায়সহ প্রকাশ্য হামলা করত। সেই থেকে এই পর্যন্ত অপরাধের বিশাল ইতিহাস রয়েছে যা আমরা লিখনির মাধ্যমে আগামীতে আরও প্রকাশ করব।
গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অনুসন্ধনী সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা তার হুমকির শিকার হয়েছেন। সে আমাদের প্রতিনিধিদেরকে বলেন, তার হাত অনেক লম্বা। তার বিরুদ্ধে নিউজ করে কোন লাভ হবে না। প্রতিনিধিদেরকে হুমকি স্বরুপ আরো বলেন যে, তাকে এখনো সাংবাদিকেরা চিনে নাই। তার বিরুদ্ধে যে সব সাংবাদিক নিউজ করবে তাদেরকে দেখে নেবে। সে থানা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাহায্যে মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসী দিয়ে যেকোন সময় যে কোন সংবাদিককে হামলা করতে পারে যার প্রমান সে ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
গাভী ইলিয়াছের অপকর্মের বিষয় পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবায়ের সৈয়দ বলেন, গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে তার ভাই ওসমানসহ মোট দুইটি অভিযোগ রয়েছে যা বর্তমানে থানায় তদন্তাধিন অবস্থায় রয়েছে। এই বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাভী ইলিয়াছের পরিচিত বার আউলিয়ার একজন কর্মী মো: কামাল বলেন, লাইসেন্স থাকার সত্তে¡ আমি চাঁদা না দেওয়ার কারনে আমার বোট এখনো মাছ ধরতে যেতে পারছে না। আমার মাছ ধরার বোট নিয়ে বের হলে গাভী ইলিয়াছ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে মারধর করার হুমকি দেয়। গাভী ইলিয়াছর একাধিক মাছ ধরার বোট রয়েছে যার মধ্যে প্রায় সব গুলোরই কোন প্রকার লাইসেন্স নাই। এই বিষয়ে থানা প্রশাসন ও ওয়ার্ড কমিশনারকে জানালে তারা নিরব ভূমিকা পালন করে। গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করলেও গাভী ইলিয়াছের দৌরাত্ব এবং জেলেদের উপর নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। পরবর্তীতে আমাকে গুম করে হত্যার করবে মর্মে হুমকি দেয়।
গাভী ইলিয়াছের অত্যাচারের ভুক্তভুগি মো: সাইফুল জানান, আমি বার আউলিয়া অধিনস্থ একজন মৎসজীবি। আমার লাইসেন্সকৃত বোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলে জেলেদের জলদস্যুরা মারধর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক জেলেদের আবার খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে আমরা জান মালের নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছি। আমরা ভুক্তভুগিরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করেও কোন প্রকার সুরাহা হয়নি। আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছি। আমরা সকল জেলেরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কামাল আর সাইফুল ছাড়াও গাভী ইলিয়াছের জুলুমের শিকার হয়েছেন বার আউলিয়ার মৎসজীবি প্রদীপ জলদাশ, শ্যামল দাশ, সজল দাশ, সজিব দাশ, শুকুমার দাশ, রানা দাশ, হিরণ দাশ, কাঞ্চন দাশ, সমীর দাশসহ আরও অনেকে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গাভী ইলিয়াছ কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
চট্টগ্রাম পতেঙ্গার গাভী ইলিয়াছের অপকর্মের ইতিকথা
পূর্ববর্তী পোস্ট