নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার কলারোয়া সদরে তিন শতক জমির উপর একটি বসতঘর নিয়ে বিরোধ আপন দুই ভাইয়ের। বিরোধের জের গড়িয়েছে থানা পুলিশ থেকে জেলখানা পর্যন্ত। জেলখানায় এখন মা-বাবা। ঈদের দিনে অন্যের জিম্মায় থাকা দুই অবুঝ শিশু সন্তান অঝরো কাঁদছে।
অবুঝ দুই শিশু মারিয়া (৮) ও মার্জিয়ার (৩) বাবা মারুফ হোসেন ও মা সাবিনা ইয়াসমিন বর্তমানে বড় ভাই কামরুজ্জামানের মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। তারা কলারোয়া সদরের সরকারি কলেজের পূর্বপাশের বাসিন্দা। মারুফ হোসেন ও কামরুজ্জামান ওই এলাকার মৃত. অমেদ আলীর ছেলে।
মা-বাবা জেলখানায় দুই শিশু রয়েছেন কলারোয়া পৌরসভার ঝিকড়া গ্রামের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফজলুর রহমানের জিম্মায়।
ফজলুর রহমান জানান, কলারোয়া সরকারি কলেজের পূর্বপাশের বাসিন্দা বড় ভাই কামরুজ্জামান ও ছোট ভাই মারুফ হোসেনের মধ্যে তিন শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন। সেখানে একটি বসতঘর রয়েছে। যে ঘরে মারুফ বসবাস করে। সে ঘরটি বড় ভাই কামরুজ্জামান নিজের জমি দাবি করে আসছে।
তিনি বলেন, ওই জায়গা নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিশী বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে জমি মারুফ হোসেনকে দেয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তবে বড় ভাই কামরুজ্জামান দাবি করে মা মৃত্যুর আগে ওই জমি তাকে টিপসই দিয়ে লিখে দিয়ে গেছে। ওই জমির উপর থাকা ঘরে কামরুজ্জামান তালা ঝুলিয়ে দিলে গত শনিবার (২৩ মে) ছোট ভাই মারুফ হোসেন তালা ভেঙে পাল্টা তালা লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কামরুজ্জামান থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলে পুলিশ এসে কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে মারপিট করে। এরপর তারা কলারোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রোববার (২৪মে) হাসপাতাল থেকে ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানাতে কলারোয়া রিপোর্টাস ক্লাবে যায় মারুফ ও তার স্ত্রী। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় হাসপাতাল গেট থেকে পুলিশ মারুফ ও তার স্ত্রীকে আটক করে বিকেলে জেলহাজতে পাঠায়। তাদের দুই শিশু সন্তানকে উপজেলা চেয়ারম্যান আমার জিম্মায় দিয়েছেন। তারা আমার কাছে রয়েছে। ঈদের দিনে সারাদিন মা-বাবার জন্য কাঁদছে দুই শিশু। ছোট মেয়ে মার্জিয়া এখনো মায়ের দুধ খায়। কোনভাবে সামলানো যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, তারা তিন ভাই। তাদের মা জীবিত থাকা অবস্থায় বড় ভাই কামরুজ্জামান চুরি করে মায়ের কাছ থেকে তিন শতক জমি লিখে নেয়। বর্তমানে নদীর চর উঠে সেখানে ৯-১০ শতক জমি হয়েছে। সেই জমিতে কামরুজ্জামান কাউকে থাকতে দিতে চান না। মূলত এটা নিয়েই বিরোধ। এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় মামলা হলে ট্রাক চালক মারুফ হোসেনের দুই শিশু সন্তানকে মানবিক দিক বিবেচনা করে হেলপার ফজলুর রহমানের জিম্মায় দিয়েছি।
এসব বিষয়ে কামরুজ্জামান জানান, আমার তালা দেয়া ঘরে রোববার বিকেলে স্ত্রীকে রান্না করতে বলি। ছোট ভাই মারুফ তখন বাড়িতে ছিল। মারুফ এখানে বসবাস করতো না। তিন বছর ধরে বসবাস করছে। আমার ঘরের তালা ভেঙেছে। আমাকে মারপিট করেছে, স্ত্রীকেও মারপিট করেছে। পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছি। ঘরটি আমি সাত বছর আগে তৈরী করেছি ওই ঘরটি মারুফ তার নিজের বলে দাবি করে। ভাইঝি দুটো কার কাছে রয়েছে আমি এখনো জানি না।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর উল গিয়াস বলেন, কামরুজ্জামান থানায় ঘরবাড়ি ভাংচুর, মালামাল লুট, স্ত্রী শ্লীলতাহানির একটি মামলা দিয়েছে থানায়। সেই মামলায় আটক করে মারুফ ও তার স্ত্রীকে রোববার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি পক্ষ মারুফদের ব্যবহার করে পুলিশের বিরুদ্ধে বলাচ্ছে। মারপিটের যে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে তা আদৌ সঠিক নয়।
জেলখানায় মা-বাবা, ঈদের দিন কাঁদছে দুই অবুঝ শিশু
পূর্ববর্তী পোস্ট