দিনাজপুর থেকে ফিরে আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ও স্থপনা ইতিহাস আর মহাকালকে সাক্ষী হিসাবে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মুল্যবোধকে সমুন্নত রেখেছে দিনাজপুর জেলার নায়বাদ মসজিদ এর মধ্যে অন্যতম। মসজিদটি সকল ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান হিসাবে পরিচিত। প্রাচীনতম মসজিদ সমূহের মধ্যে অন্যতম এটি। স্থাপত্যকলা শিল্পসৌকর্য্য নিয়ে মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। কাহারোল উপজেলার ঢেঁপা নদীর পশ্চিম তীরে শান্ত নিবিড় গ্রামীন পরিবেশে নয়াবাদ মৌজায় মসজিদটি অবস্থিত। প্রাচীন আমলে নির্মিত মসজিদটি কবে এবং কার শাসন আমলে তৈরি তার সঠিক বিশ্লেষন কঠিন ব্যপার। কেউ মনে করেন এটি মুসলিম শাসন আমলে কেউ বলেন নবাবী আমলে নির্মিত। আবার কারও মতে মুঘল সম্রাট দ্বীতীয় শাহআলমের সময় বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শায়খ মুজিবআলার তত্ত্বাবধানে কান্তজিউ মন্দির নির্মানের কারিগররাই তাদের শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় এটি নির্মান করেছেন বলে জানা যায়। যেহেতু কান্তজিউ মন্দির মোঘল স্থাপত্যের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। যা ইন্দো-পারস্য শিল্প রীতির আলোকে নির্মিত, ঠিক তেমনি নয়াবাদ মসজিদটিও তার স্থাপত্যরীতি অপরূপ গঠন বিন্যস মার্জিত শিল্পচাতুর্য রক্তির রঙ্গের উজ্জল কারুকার্য্য সাদৃশ্য বহন করে। মসজিদটি সামগ্রিক দৃশ্য এমনই মাধুলী মন্ডিত স্থাপত্যশিল্প এখানেও ইন্দো-পারস্য শিল্পরীতি পত্যক্ষ প্রভার লক্ষকরা যায়। তাই সহজে জানা যায় কান্তজিউ মন্দির নির্মানের স্থপতিগনই এ মসজিদের নির্মাতা। মুসলমান মিস্ত্রিরা নামাজের জন্য এটি নির্মান করেন। মসজিদটি নির্মানের কত সময় বা কত অর্থ ব্যায় করা হয় তা জানা সম্ভব হয়নি।মসজিদের পৃর্ব দেওয়ালে প্রবেশ দ্বারের উপর ১২”/৯” আয়তাকার এক খণ্ড মসৃণ প্রস্তরের শিলালিপি সংস্থাপিত আছে যা প্রাচীন ফরাসি অক্ষরে লিপিবদ্ধ, কোন কোন জায়গায় অক্ষরগুলো অস্পষ্ট বিধায় সঠিক তথ্য অনুবাদ ও সাল তারিখ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
টেরাকোটর নকশা খচিত অনুপম সৌন্দর্য্য মণ্ডিত মসজিদটি নির্মানের কারিগর ছিলেন অন্যদেশের। কান্তজিউ মন্দির নির্মানের জন্য দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রীঃ) সুদূর পারস্য হতে তাদের নিয়ে আসেন। মন্দির নির্মান শেষে তাদেরকে মহারাজা কিছু জমি দিয়ে নয়াবাদ গ্রামে বসবাসের অনুমতিদেন। মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক পরিবার ও স্থানিয় সূত্রে জানা যায় মন্দির নির্মান শেষে অনেকেই আর নিজ দেশে ফিরে যায়নি। অবশেষে তাদের মৃত্যুর পর নয়াবাদ মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিন পাশে কবরস্থ করা হয়। মসজিদ নির্মাতা কারিগরদের মধ্যে নেওয়াজ মিস্ত্রি ও কলুয়া মিস্ত্রি নাম অত্যাধীক পরিচিত ছিল।তারা যে মহল্লায় বসবাস করতো সেটা মিস্ত্রিপাড়া নামে পরিচিত। মিস্ত্রির বংশধরগন সে সময় থেকে মসজিদের তত্ত্বাবধান করে আসছেন। মোঘল স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্বলিত নয়াবাদ মসজিদটি দেখতে খুব বড় নয়। তবে এর ঐতিহ্য নির্মানের কলা কৌশল সমূহ বড় মাপের এত সুন্দর কারূকার্য তৈরিকৃত মসজিদ বাংলাদেশে বিরল। তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট অঅয়তাকার মসজিদটির দৈঘ্য ১২.৪৫ মিটার, প্রস্থ ৫.৫ মিটার, দেওয়ালের প্রস্থতা ১.১০ মিটার। মসজিদের প্রবেশদার ৩টি, ২টি জানালা ভিতরে মিহরাব বহু খাঁজযুক্ত খিলানাকৃতির নকশা খচিত। মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে অধিভুক্ত একটি সংরক্ষিত পুরার্কীতি।