হাবিবুর রহমান: ভোমরা স্থলবন্দর অস্থিতিশীলের মূলে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান এ অভিযোগ বন্দরের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের। শ্রম অধিদপ্তরের রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত ভোমরা স্থলবন্দরের ৮টি সংগঠনের ভুক্তভোগী নেতাদেরও তীর মিজানুর রহমানের দিকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মিজানুর রহমান কলকাটি নেড়ে অশুভ একটা শক্তি ব্যবহার করে বন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সিএন্ডএফ এজেন্ট্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফরহাদ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধীকারি ওহিদুল ইসলাম সাতনদীকে বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানরাই দেশটাকে ধ্বংস করছে। তিনি অতিশয় লোভী। চোরকে বলেন চুরি করতে আর গৃহস্থকে বলেন সজাগ হতে, অর্থাৎ বাদী-বিবাদী দু’পক্ষের কাছ থেকে তিনি সুবিধা নিয়ে থাকেন। দু’পক্ষকে মাঠে নামিয়ে তিনি তার স্বার্থ হাসিল করেন। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের কমিটি ভাঙ্গা-গড়ার মূল নায়ক তিনি। এতে করে স্থলবন্দরটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ওপারের সিরিয়ালের নামে দৈনিক ৭০/৮০লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী হচ্ছে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পদে আসবে তখন তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবে। আদালতের নির্দেশনায় ১৬ এপ্রিল সাধারণ সভা আহবান করার পর আহাবায়কের পদ ভাঙ্গা-গড়া করা হলো। ভাঙ্গা-গড়ার খেলোয়াড়রা চাইছেনা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি আসুক।
তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ। যেকোন মূল্যে সংগঠনটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। এজন্য আমরা যা যা করার করবো। ব্যবসায়ীদের একটা প্রতিনিধিদল আজ শনিবার সিএন্ডএফ এজেন্ট্স এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সাথে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বসবেন বলে যুক্ত করেন। প্রয়োজনে সাধারণ সদস্যরা গঠনতান্ত্রিকভাবে সিএন্ডএফ এজেন্ট্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সভা আহবান করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।
এজাজ আহমেদ স্বপনকে সরিয়ে আহবায়ক বানানো হয়েছে মিজানুর রহমানকে। নোট ছাড়া একাজ কিন্তু হয়নি। অথচ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাছিমের বিরুদ্ধে এক কোটি ১০ লক্ষ টাকার অডিট আপত্তি অভিযোগ পেলেও শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান কোন ব্যবস্থা নেননি।
তিনি যোগ করে বলেন, গুলি-বন্দুকের ভয় দেখিয়ে এবার আর পাতানো কমিটি দেয়া যাবে না। সেটা মানবেনা বন্দরের সংশ্লিষ্ট অন্তত দশ হাজার মানুষ।
রাফসান ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত¡াধীকারী আবু হাসান সাতনদীকে জানান, ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ওপারে সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এজন্য ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ওপারের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও নতুন করে তা আবার শুরু হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছ কমিটি আনলেই কেবল এসব বন্ধ হবে। আজ আহবায়ক একজন কাল দেয়া হচ্ছে আর একজনকে। আহবায়ক নির্বাচনের জন্য আজ ১৬ এপ্রিল বিশেষ নির্বাচনী সাধারণ সভা দিলেও নতুন আহবায়ক মিজানুর রহমান তা বন্ধ করে ২৫ এপ্রিল নিয়ে গেছে। তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
বন্দরের শীর্ষ পাথর ব্যবসায়ী এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট্স এসোসিয়েশনের কর্মচারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিলন সাতনদীকে বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের ঘুষখোর কর্মকর্তারা টাকা হলে সব কিছু করতে পারেন। তাদের কারনেই সংগঠনটিতে নির্বাচন হচ্ছেনা। এজন্য বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বছরে অন্তত ৫০ কোটি টাকা শুল্ক দেই। পাথরের গাড়ী ঢুকতে লাগে ৫০/৬০ দিন। এ কারণে পাথরের দাম হু-হু করে বেড়ে চলেছে। আমরা ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়ছি।
সোনালী ট্রেডার্সের নাসির উদ্দীন সাতনদীকে বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান একজন চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ। এমন কোন সংগঠন নেই যেখান থেকে তিনি সুবিধা নেননা। তার কাজ সংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে দু’পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নেয়া। তিনি টাকা ছাড়া নড়েনইনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওপারের সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজির কারণে পন্যবাহী ট্রাক ২ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করে অপর পন্যবাহী ট্রাক আসতে ৬০দিনও সময় লাগে।
বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট্স এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটির ভাঙ্গা-গড়া নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মিজানুর রহমান সাতনদীকে জানান, কমিটি ভাঙ্গা-গড়ার দায় আমার না। ৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি একজনকে অপসারন করে নতুন আহবায়ক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথেও কথা বলেছি। প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলবো। আগামীতে ভোটের মাধ্যমে কমিটি না হলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।
দুর্নিতীবাজ মিজানুর রহমানের জন্যই বন্দর অস্থিতিশীল!
পূর্ববর্তী পোস্ট