প্রধান প্রতিবেদক : সাবেক এমপি আব্দুল জব্বারের কমিউনিটি সেন্টার এখন সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ লেখা থাকলেও বাস্তবতা রয়েছে শুধু স্কুলের, কলেজ রয়েছে সাইনবোর্ডে। একদিকে, প্রতারণার ফাঁদ অন্যদিকে, টাকা হাতানোর মেশিন পাবলিক স্কুল এ- কলেজটি। অবিভাবকদের সরল কথা, টাকা থাকলে ভর্তি করেন এখানে টাকা না থাকলে অন্য কোথাও নিয়ে বাচ্ছাকে ভর্তি করান। এখানে শুধু বাইরে চাকচিক্কো ভিতরে ফাঁকা। আছে শুধু স্টাইল এছাড়া কিছু নেই।
সাতনদীর সঙ্গে আলাপকালে বেশ কয়েকজন অবিভাবক এভাবেই তাদের সরল উক্তি প্রকাশ করেন। শহরের মিলগেট এলাকার এক অবিভাবক বলেন, আমার মেয়েকে গত এক বছর আগে এখানে ভর্তি করেছিলাম। মেয়েটাও খুব মেধাবী। এখানকার বাইরের অবস্থা দেখে মনে করেছিলাম ভালো হবে কিন্তু উল্টো হয়েছে। ভালোর থেকে আরও খারাপ হয়েছে। এখানে কোন বোর্ড বই ফলো করে না শুধু শিট ধরিয়ে দিবে। সেই শিট পড়তে হবে। আর শুধু টাকা দাও। মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসবে কিন্তু বাড়িতে মোবাইলে ম্যাসেজ যাবে মেয়ে স্কুলে আসেনি। ডিজিটাল হাজিরা করেছে সেটাও ভুলভাল। মেয়ে স্কুলে থাকে আর বাড়িতে ম্যাসেজ যায় মেয়ে স্কুলে আসেনি।
তিনি বলেন, এদের শুধু টাকা দাও লেখাপড়ার খোঁজ নেই। সেই সব টাকা দিয়ে বাস কিনবে, চাকচিক্কো করবে। প্রত্যেক মাসে বাড়তি টাকা দিতে হবে দুই হাজার টাকা। আমি টাকা পয়সা সব পরিশোধ করে দিয়েছি। এখানে আর মেয়েকে পড়াবো না। এ বছর এখান থেকে দুইশ বাচ্ছা বের হয়ে যাবে। একবার ভর্তি করলে এক বছর পর আর কেউ এখানে বাচ্ছাদের রাখে না। এক কথায় এখানে ভর্তি করালে বাচ্ছার ভবিষ্যত শেষ।
শহরের সুলতানপুর এলাকার শেখ আবু তুষার তার মেয়ে ফাতেহা কাইয়ুম তোহাকে পড়াচ্ছেন সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ- কলেজে। তোহা জুনিয়র থেকে এখন স্টান্ডার্ড ওয়ানের শিক্ষার্থী।
তোহার বাবা শেখ আবু তুষার জানান, সাত হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে এখানে ভর্তি করেছিলাম। গাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে নেয় দুইশ টাকা, বেতন ১২শ টাকা, ডিজিটাল হাজিরা বাবদ মাসে ১৮০ টাকা এছাড়া আনুসঙ্গিক খরচ রয়েছে। বিত্তশালী বাবারা ছাড়া তার সন্তানকে এখানে পড়াতে পারবেন না।
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একশ গজ দূরে অবস্থিত জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়। তার সামনেই সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, টাউন গার্লস হাই স্কুল। একশ গজের মধ্যেই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ। অনেকের অভিযোগ, শিক্ষানীতি উপেক্ষা করেই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের একশ গজের মধ্যেই করা হয়েছে বে-সরকারি পাবলিক স্কুল এ- কলেজ। যেখানে শিক্ষা নয় চলে শিক্ষা ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আলাউদ্দীন ফারুকী প্রিন্স প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষা দূর্ণীতির কার্যক্রম। পরিচালক প্রিন্সের এক ভাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অপর ভাই হোষ্টেল সুপার। অবিভাবকদের জিম্মি করেই চলে জুনিয়র শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার নামে টাকা উত্তোলন ব্যবসা।
সাতক্ষীরা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার দাশ বলেন, সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ- কলেজ পরিচালনার অনুমতির জন্য আমার কাছে লিখিতভাবে নিতে এসেছিল। তবে আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। কিভাবে সরকারি একটা প্রতিষ্ঠাণের পাশেই আরেকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ গড়ে তুলেছে আমি জানি না।
গড়ে তোলার পর আপনি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি কি ব্যবস্থা নিবো ?
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ- কলেজের পরিচালক আলাউদ্দীন ফারুকী প্রিন্সের কাছে জানতে চাওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণটির বিরুদ্ধে উঠে আসা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে। তিনি বলেন, পাবলিক স্কুল এ- কলেজে ৫শ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাসে কেমন টাকা উত্তোলন করা হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একেক জনের কাছ থেকে একেক রকম টাকা নেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি কোন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, অফিসে আসেন বিস্তারিত কথা বলবো।
সামনে সাতক্ষীরা বালক উচ্চ বিদ্যালয় পেছনে পাবলিক স্কুল এ- কলেজ কিভাবে হলো এ প্রশ্নের উত্তর নেই জেলা শিক্ষা অফিসার এস. এম. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছেও। তিনিও সরল ভাষায় জানালেন, শিক্ষা বোর্ড কিভাবে পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে সেটি আমি বলতে পারবো না।
জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, আমার কাছেও এসেছিল শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ে নেওয়ার জন্য তবে আমি নাকোজ করে দিয়েছি। কেননা সেখানে কিভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয় সেটিও আমাদের জানা নেই। তাদের নিজস্ব কোন জমি আছে কিনা সেটিও আমি জানি না। একটা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের আড়াই কিলোমিটার দূরে আরেকটি হওয়ার কথা কিন্তু শহরের ঘনবসতির কারণে দূরত্ব একটু কম হতে পারে তবে এত কাছে কি করে হল আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, তাদের কলেজের কোন অনুমোদন বা স্বকৃতি নেই। দশম শ্রেণিরও চলতি বছর অনুমোদন হয়েছে। এর আগে বাইরের স্কুল থেকে ওই প্রতিষ্ঠাণের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ানো হতো। সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের জন্য একটি সেশন চার্জ নির্ধারণ করা রয়েছে। তারা যদি তার বাইরে কোন টাকা উত্তোলন করেন তবে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পাবলিক স্কুল এ- কলেজ নামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের কার্যক্রমের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
বাইরে ফিট-ফাট ভিতরে ফাঁকা, সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের চাই শুধু টাকা
পূর্ববর্তী পোস্ট