নিজস্ব প্রতিবেদক: লাঙ্গল প্রতীকের কর্মীর হামলায় প্রধান শিক্ষক আবজারুল হক গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের ভাবানিপুর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সহায়তা তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শরিফুল ইসলাম নামের একজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ০৫জানুয়ারী ২৪ এর ৩নং মামলার এজাহারে মামলার বাদী আনোয়ার জাভিদ সজল দাবি করেন ‘তার আপন চাচা মোঃ আমিনুল হক আমিনের সাথে জমি জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ আছে এবং আমিন ঈগল প্রতীকের সমর্থক। জমি জায়গা ও যাতায়তের পথ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাস্তাঘাটে আবজারুল হককে হুমকি-ধমকি দেয় আমিনুল হক আমিন। বাড়ি পাশের চায়ের দোকান থেকে চা পান শেষে বাড়ি ফেরার পথে আবজারুল হকের ওপর আমিনসহ ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হামলা করে। লোহার রড, জিআই পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আবজারুলের ওপর হামলা করে তারা। এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।’
লাঙ্গলের প্রার্থী আশুর দাবী:
আবজারুল হককে হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু উপস্থিত হয়ে একটি ভিডিও বার্তায় দাবী করেন, ‘আবজারুল হক লাঙ্গল প্রতীকের কর্মী। তার ওপর ঈগল প্রতীকের কর্মী আমিনুল হক আমিন, শরিফুল ইসলাম, রনি, শাওন, ইসমাইল, মফিজুর সহ অন্যান্যরা আবজারুল হকের ওপর বাঁশদহার চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুল ইসলামের নির্দেশে হামলা করে। তিনি আরও বলেন, লাঙ্গলের জয় সুনিশ্চিত দেখে ঈগলের প্রার্থী ও তার লোকজনের ইন্ধনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।’
লাঙ্গলের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বাঁশদহার চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, ‘এ হামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। একটি পক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও ভোট টানার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করেছে।’
যা বলল মামলার বাদী:
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী ও আবজারুল হকের ছেলে আনোয়ার জাভিদ সজল সাতনদীকে জানান, ‘আমার বাবা লাঙ্গলের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বাড়ি ফিরে বাড়ির পাশের চায়ের দোকান থেকে চা পান করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ঈগল প্রতীকের কর্মী আমিনুল হক, শরিফুল ইসলাম, রনি, শাওন, ইসমাইল, মফিজুর সহ আরও ১০ থেকে ১২ জন আমার বাবার ওপর হামলা করে। আমার বাবা লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক হওয়ায় তার ওপর এ হামলা ঘটনা ঘটে।’ চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুলের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবে তিনিও ঈগলের সমর্থক।’ মামলার এজাহারে জমি জায়গা সংক্রান্ত শত্রæতার জেরে হুমকি ধমকি ও এর জেরেই হামলা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘জমি জায়গা সংক্রান্ত কোন বিরোধ নাই। যা ছিলো তা অনেক আগের। লাঙ্গলে সমর্থনের কারণে বাবার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।’
প্রকৃত ঘটনা:
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের ভবানিপুর ইউনাইটেড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবজারুল হকের ওপর হামলা ঘটনা সত্য হলেও এর সাথে ঈগল প্রতীকের কর্মীদের কোন যোগসাজস নেই। উল্টো এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামী আমিনুল হক আমিন লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক ও কর্মী। ইতোপূর্বে তাকে লাঙ্গলে সভায় দেখতে পাওয়া যায়। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন গত পহেলা জানুয়ারী তারিখে বাঁশদহার রেউর বাজারে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশুর নির্বাচনী জনসভার মঞ্চের দ্বিতীয় সারিতে দেখা গেছে আমিনুল হক আমিনকে। তার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসাইন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় আবজারুল হকের আপন ছোট ভাই আমিনুল হক আমিন। জমি জায়গা ও রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন দুই ভাইয়ের সাথে বিরোধ চলছিলো। সেই বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটতে ঘটেছে।