জগন্নাথ রায়:
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সুন্দরবনে দস্যুবৃত্তির কাজে লিপ্ত। তারা বছরে এই বন থেকে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজি করে। খুব শিঘ্রই এ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় সুন্দরবনের অপরাধ চিত্র তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ মম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বার এসব কথা বলেন। করোনার মধ্যেও জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্যও দেয়া হয়। সেখানে ৪জনকে গ্রেফতারের কথা বলা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মামুনুর রহমান ওরফে খোকা বাবু, দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের মহিউদ্দীন গাজীর ছেলে আলাউদ্দীন গাজী, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার আব্দুল হাকিম গাজীর ছেলে তৈয়েবুর রহমান কামরান ও একই এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে রহমান এন্টার প্রাইজের মালিক সাইদুর রহমান সাইদ।
পুলিশ সুপার উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘ বক্তব্যে সুন্দরবনের অপরাধচিত্র তুলে ধরুন। ওই সময় ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোকে বনদস্যুদের তৎপরতার চিত্র উঠে আসে। পশ্চিম সুন্দরবনে র্যাবের ক্রসফায়ারে দু‘জন নিহত হওয়ার সূত্র ধরে সুন্দরবনের গহীনের বনদস্যু-জলদস্যুদের নেটওয়ার্ক এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উল্লেখ পূর্বক পুলিশ সুপার হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেন,দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। ইতোমধ্যে ওপারের পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলার প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। দু‘দেশ যৌথভাবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে। কিছু হোয়াটসআপে চুক্তির মাধ্যমে অপরাধীদের অর্থ ওপারে পাঠাচ্ছে। তাদের হোয়াইট আপ্যের যোগাযোগের কথা এখন পুলিশের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে।
তিনি আরও বলেন, সুন্দবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কালিন্দী নদীতে মাছ ধরার সময় গত ২০ জুন ২০২০তারিখে শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের এশার আলী গাজী ও প¦াশের্^খালী গ্রামের আজিবর রহমানসহ ৮/৯ জন জেলেকে মুক্তিপণের দাবীতে অপহরন করে কতিপয় জলদস্যু। এরপর তাদেরকে সীমান্তবর্তী দেশ ভারতে নিয়ে যায় তারা। অপহরনকারী জলদস্যুরা পরে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে তাদের দাবীকৃত মুক্তিপন নিয়ে উক্ত জেলেদেরকে ছেড়ে দেয়। পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর্জা সালাহ উদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম উক্ত জলদস্যুদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে। এ সময় জলদস্যুতায় সংশিষ্ট থাকার অভিযোগে উক্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে বাংদেশী নাগরিক প্রদিপ, পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা এলাকার মিঠুনদাস এবং ভারতের বসিরহাট ত্রিমোহিনী এলাকার আক্তার আলম গাজী, পান্না, বাপ্পী ও ঘোজাডাঙ্গা এলাকার হাসান এন্টার প্রাইজের মালিক নুনু। তিনি জানান, উক্ত ব্যক্তিরা জলদস্যুদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন থেকে জেলেদের অপহরন করে জোরপূর্বক আটকে রেখে মুক্তিপন আদায়, মারপিটসহ নানাভাবে তাদেরকে নির্যাতন চালায়। আর অবৈধভাবে অর্জিত তাদের এই অর্থ ভারতে পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৪ জনসহ উক্ত ১০ জনের নামে জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই ফরিদ হোসেন বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৮। তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীর মধ্যে সাইদুর রহমান সাইদ, অপহৃত এশার আলী ও এ মামলার স্বাক্ষী সৈয়দ হারিজ হোসেন তুহিন ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে সকল আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান।
বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডি কারবারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বনদস্যু-জলদস্যুরা জেলে-বাওয়ালীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করে তা বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডিকারবারীরা অপরাধীদের হাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সবাইকে এ ব্যপারে সজাগ থাকতে হবে। জেলে বাওয়ালীরা ৯৯৯ এ ফোন করলেই তাদের পাশে ছুটে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনন্স, ড্রিলসেডে সুন্দরবনের দস্যুতা,অপহরন,চাঁদা আদায় সহ নানাবিধ অপরাধ চিত্রের তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার।
সুন্দরবন নিয়ে ব্রিফিং শেষে তিনি করোনার ভয়াবহতা নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি ৪০ জনের করোনা পজেটিভ হতে পারে উল্লেখ করে বলেন,নলতার খাদেম সাহেব এর সংম্পর্শে এসেই এসব মানুষ আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন।