মোঃহাসানউল্লাহ: সাতক্ষীরায় চলতি মাসের এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক। ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই আছে অবৈধ যানবাহন।
নছিমন-করিমন-আলমসাধুর মতো অবৈধ ভটভটির সঙ্গে এখন সড়কে যুক্ত হয়েছে ‘ইটভাটার ট্রলি’ আতঙ্ক। চলতি মাসে এই অবৈধ যানবাহন সড়কে পিষে মেরেছে অগনিত মানুষকে।
ইটভাটার ট্রলি ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলারচালিত যানবাহন। এই যানবাহন দিয়ে সাধারণত ইটভাটার ইট, বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়। অথচ ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দুটিই মাঠে কৃষিকাজের জন্য অনুমোদিত, সড়ক-মহাসড়কে পণ্য বা অন্যান্য সামগ্রী বহনের অনুমতি নেই।
জানতে চাইলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করা অনেক সংগঠন নিরাপদ সড়ক চায় মোঃ আলমগীর হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, কৃষিকাজের জন্য ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহারের শর্ত থাকলেও এগুলো অবৈধভাবে মহাসড়কে ইট, বালু ও মাটি বহন করছে। মাটি বহনের সময় তা রাস্তায় পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদামাটিতে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি চালক অদক্ষ হওয়ায় এসব যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রয়োজনে তাঁরা অবৈধ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন।
জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে শতাধিক ভাটা রয়েছে। ভাটাগুলো মাটি, বালু, ইটসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহনে পুরোপুরিই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারচালিত ট্রলির ওপর নির্ভরশীল। গড়ে প্রতিটি ভাটায় ২০টি করে এমন যানবাহন রয়েছে। সেই হিসাবে জেলার সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২ হাজারের বেশি ‘ইটভাটার ট্রলি।বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর বেশির ভাগেরই কারণ অবৈধ যানবাহন। অথচ উচ্চ আদালত থেকে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মহাসড়কে এসব অবৈধ যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সড়কে প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য অবৈধ যানবাহন দায়ী। বৈধভাবে যানবাহন চালাতে গাড়ির নিবন্ধন, বিমা, রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। অথচ এসব অবৈধ গাড়ি কাগজপত্র ছাড়াই চলছে। চালকদেরও ন্যূনতম প্রশিক্ষণ নেই। এসব কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। চলতি মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা অবৈধ ভটভটির সংখ্যা কত, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে জেলার সড়কগুলোতে এ ধরনের যানবাহনের কারণে এখন পা ফেলানো দায়। হাট-বাজারগুলোতে শত-শত এই যানবাহন দেখা যায়। সেই হিসাবে জেলাজুড়ে এখন হাজারে হাজারে অবৈধ এই যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
জেলার খুলনা রোড মোড়, বাসটার্মিনাল এলাকা, সার্কিট হাউজ মোড় কদমতলা ও বাইপাস রোডে এসব যানবাহন চলাচল করছে, তবে এর মধ্যে কিছু জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স থাকলেও কোন প্রকার কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি পুলিশের পক্ষ থেকে।
সাতক্ষীরা খুলনা মহাসড়কে বিনেরপোতা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট চলাকালে সরেজমিন লক্ষ করা যায় ঐ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ অনন্য বৈধ যানবাহনের কাগজপত্র দেখায় ব্যাস্ত থাকতে দেখা গেলেও চোখের সামনে দিয়ে চলাচল করা অবৈধ যানবাহনে কোন সিগনাল দিতে দেখা যায়নি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তাটিতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মাটি বহনের কাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব হল্লা গাড়ী নামক অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন গুলো মূলত ট্রাক্টর এর ইঞ্জিনে ট্রাকের বডি লাগিয়ে চালানো হয় এদের চালকেরা মাঠে লাঙ্গল চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও এরা এখন মহাসড়কের ট্রাক চালক। একজন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, এদের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই এরা মাঠে লাঙ্গল চাষের কাজে অভিজ্ঞতা নিয়েই এসব মহাসড়কে চালিয়ে বেড়ায়। এসব কারনে দূর্ঘটনা শিকার হতে হয় পথচারীদের। তথ্যনুসন্ধানে আরও জানা যায় এদের কাছে স্লিপ আছে ট্রাফিক পুলিশের এই স্লিপ নিয়ে এরা চলাচল করে। এই হল্লা গাড়ী গুলো মুলত ভাড়া নিয়ে থাকে যারা মাটির ব্যাবসা করে তারা রসুলপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম, এবং খোকন, কাশেমপুর সিটি কলেজ মোড়ের আনারুল এবং খোকন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেলের পরিদর্শক বলেন, সড়ক নিরাপত্তার জন্য এসব অবৈধ যানবাহনের চলাচল প্রতিরোধ করা জরুরি। এ জন্য শিগগিরই প্রশাসনের সহযোগিতা চাইবেন তাঁরা। জেলা প্রশাসক বলেন, অবৈধ যানবাহনের কারণে জেলায় দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য: মহাসড়কে পুলিশের সামনেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন
পূর্ববর্তী পোস্ট